অথবা, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ সংগঠনে লর্ড ভালহৌসি কতটুকু দায়ী ছিলেন? সে সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় ঘটনা। এ বিদ্রোহ সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও লেখকদের মতে, এটি ছিল সিপাহী বিদ্রোহ। লর্ড ডালহৌসির স্বত্ব বিলোপ নীতিও এ বিদ্রোহ সংঘটনের পিছনে যথেষ্ট উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল বলে ধারণা করা হয়।
ডালহৌসির দায়-দায়িত্ব : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে লর্ড ডালহৌসির দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. স্বত্ব বিলোপ নীতি: ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ সংগঠনে মূলে ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতি অনেকটা দায়ী ছিল। ডালহৌসির এই নীতি দেশীয়, রাজন্যবর্গের মনে আশঙ্কা ও ব্রিটিশদের প্রতি ঘৃনার উদ্রেক করেছিল।
২. স্বত্ব বিলোপ নীতি প্রয়োগ করে রাজ্য জয় : স্বত্ব বিলোপ নীতি প্রয়োগ করে ডালহৌসি সাতারা, নাগপুর, ঝাঁসি, সম্বলপুর প্রভৃতি রাজ্যগুলোকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিলেন।
৩. তাঞ্জোর ও কর্ণাটের নবাবদের বৃত্তি বন্ধ: তিনি তাঞ্জোর ও কনাটকের নবাবদের বৃত্তি ও নানা সাহেবের বৃত্তি বন্ধ করে দেন। এর ফলস্বরূপ নানা সাহেব ও ঝাঁসির রাণী বিদ্রোহে প্রত্যক্ষভাবে যোগদান করেন এবং সাতারা ও নাগপুরের রাজপরিবারও বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠেন।
৪. মুঘল সম্রাটদের উপাধি বিলুপ্তকরণ: ডালহৌসি মুঘল সম্রাটদের উপাধি পর্যন্ত বিলুপ্ত করতে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু ডাইরেক্টর সভার অনুমোদন না পাওয়ায় তিনি তা কার্যকর করতে পারেনি।
৫. নাগপুর ও অযোধ্যার প্রভাব : নাগপুর ও অযোধ্যার ব্যাপারে ডালহৌসি চরম অমানুষিকতার পরিচয় দেন। নাগপুরের রাজপরিবারের বিলুপ্তির সাথে সাথে রাজ প্রাসাদও লুণ্ঠন করা হয়েছিল। ওয়েলসির সময় থেকে অযোধ্যার নবাবরা ব্রিটিশদের প্রতি অনুগত ছিলেন। কিন্তু ডালহৌসির পররাজ্য গ্রাসনীতির কবল থেকে অযোধ্যা রক্ষা পায়নি। সুতরাং মহাবিদ্রোহের পূর্বেই ভারতে প্রায় সর্বত্র ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব দানাবেধে উঠতে থাকে। তাই ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের ক্ষেত্র তৈরিতে ডালহৌসির অনেকটা ভূমিকা ছিল।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের ক্ষেত্র তৈরিতে ডালহৌসির স্বত্ব বিলোপ নীতি বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। তার ভূমিকার কারণেই জনমনে গভীর অসন্তে াষ বিরাজ করেছিল। একে বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামাও বলা যায় না। ব্যাপকভাবে এ আন্দোলন ছিল রাজনৈতিক এবং এর লক্ষ্য ছিল ইংরেজ শাসনের কবল থেকে স্বদেশকে মুক্ত করা।