১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সামরিক কারণ উল্লেখ কর।

অথবা, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহেच সামরিক কারণ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের অথবা, সামরিক কারণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর: ভূমিকা: ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় ঘটনা। এই মহাবিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক ভারতীয়দের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও অসন্তে াষের বহিঃপ্রকাশ। অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, এটা ছিল ভারতীয়দের প্রথম জাতীয় সংগ্রাম বা স্বাধীনতা সংগ্রাম।

সামরিক কারণ: ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের মূলে সামারিক কারণগুলো ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সামরিক কারণগুলো নিম্নরূপ:

১. বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্য : সামরিক ক্ষেত্রে বেতনের বৈষম্য ভারতীয় সিপাহীদের মধ্যে দারুণ অসন্তোষের সৃষ্টি করে। ভারতীয় সৈন্যরা বেতন থেকে বঞ্চিত ছিল। ৫১ হাজার ৩১৬ জন ইউরোপীয় অফিসার ও সৈনিকদের পিছনে ব্যয় হতো ৫৬ লক্ষ ৬০ হাজার পাউন্ড।

২. ইংরেজ সৈন্যদের স্বল্পতা : নিজেদের যুদ্ধকৌশল সম্বন্ধে ভারতীয় সিপাহীদের উচ্চ ধারণা ছিল। তখন ইংরেজ সৈনদের কিছু অংশকে চীন ও পারস্যে প্রেরণ করা হয়। ফলে ভারতে অবস্থানরত ইংরেজ সৈন্যদের স্বল্পতা দেখে বিক্ষুদ্ধ সিপাহীরা বিদ্রোহী হতে উৎসাহিত হয়।

৩. পদোন্নতির ব্যাপারে বৈষম্য: সেনাবাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও বৈষম্যমূলক ব্যবহার করা হতো। ভারতীয় সামরিক কর্মচারী ও সিপাহীদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ ছিল না। অথচ ব্রিটিশ অনভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উচ্চ পদে নিয়োগ দেওয়া হতো। এ বৈষম্য সিপাহীদের ক্ষুদ্ধ ও অসুন্তুষ্ট করে তোলে।

৪. এনফিল্ড রাইফেলের ব্যবহার: ১৮৫৬ সালে সেনাবাহিনীতে এনফিল্ড রাইফেল নামে এক ধরনের বন্দুকের প্রবর্তন হয়। এ রাইফেলে কার্তুজ গরু ও শূকরের চর্বি মিশ্রিত ছিল যা দাঁত দিয়ে কেটে রাইফেলে ঢুকাতে হতো। যা ভারতীয় মুসলিম ও হিন্দু সৈন্যদের জন্য ধর্ম বিরুদ্ধ ছিল। ফলে বিক্ষুদ্ধ উভয় ধর্মালম্বীর সিপাহীরা প্রত্যক্ষভাবে বিদ্রোহের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

৫. মঙ্গল পান্ডের বিদ্রোহ ঘোষণা : সব দিক দিয়ে যখন বিদ্রোহের ক্ষেত্র প্রস্তুত তখন ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুর সেনানিবাসে মঙ্গল পান্ডে নামক এক সিপাহী প্রকাশ্যভাবে বিদ্রোহী হলে সমগ্র ভারতবর্ষে মহাবিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠে এবং সর্বস্তরের শোষিত ভারতীয় জনগণ এ বিদ্রোহের প্রডি সমর্থন জানায় ও সহযোগিতা প্রদান করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশদের শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভও অসন্তোষের তীব্র বহিঃপ্রকাশ ছিল এই বিদ্রোহ। সিপাহী জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংঘটিত এই বিদ্রোহ ছিল ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদের প্রথম পদক্ষেপ। সিপাহীদের মধ্য থেকে এই বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটে বলে এই বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ বলেও আখ্যায়িত করা হয়।