১৯০৬ সালের সিমলা ডেপুটেশনের দাবিসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, সিমলা ডেপুটেশনের দাবিগুলো কি কি? সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, ১৯০৬ সালের সিমলা ডেপুটেশনের দাবি সম্পর্কে সংক্ষেপে ব্যাখা কর।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা মনে প্রাণে মেনে নিতে পারেননি। তবে ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্রিটিশ শাসনকে স্বাগত জানায় এবং সমাজে নিজেদের স্থান করে নিতে সক্ষম হন। এক পর্যায়ে দেখা যায়, সকল দিক থেকে ভারতীয় হিন্দুরা স্থান করে নেয় এবং মুসলমানরা অবহেলিত বলে পরিগণিত হয়।

সিমলা ডেপুটেশনের দাবিসমূহ: মুসলমান প্রতিনিধি দল সিমলা ডেপুটেশনে ভারতবর্ষে মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কতকগুলো দাবি করেন, দাবিগুলো হলো:

১. পৃথক নির্বাচকমণ্ডলীর ব্যবস্থা: সিমলা ডেপুটেশনে মুসলমানরা স্থানীয়, প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সমস্ত কাউন্সিলে মুসলমান প্রতিনিধিগণ তাদের পৃথক মুসলিম নির্বাচকমণ্ডলী দ্বারা নির্বাচিত হবেন। এর ব্যতিক্রম করা যাবে না।

২. মুসলমানদের পৃথক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা : তারা মতামত ব্যক্ত করেন যে, ভারতে মুসলমানরা একটি পৃথক সম্প্রদায় এবং তাদের স্বার্থ ও হিন্দুদের অন্যদের চেয়ে পৃথক তাই তাদের স্বার্থরক্ষার গ্যারান্টি দিতে হবে। যাতে অন্য সম্প্রদায়ের দ্বারা তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ না হয়।

৩. পৃথক আসন সংরক্ষণ : এতে বলা হয় যে, যেহেতু ভারতে মুসলমানরা সংখ্যায় কম এজন্য জনসংখ্যাগত শক্তি, অপেক্ষা বেশি আসন সংরক্ষণ করতে হবে।

৪. আইনসভায় মুসলিম প্রতিনিধি নিয়োগ: সিমলা ডেপুটেশনে মুসলমান প্রতিনিধিরা দাবি করেন যে, আইন সভায় মুসলিম প্রতিনিধিকে কেবল মুসলিম ভোটেই নির্বাচিত হওয়ার অধিকার দিতে হবে।

৫. স্থানীয় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ: মুসলমানদেরকে স্থানীয় পরিষদ, যথা- পৌরসভা, জেলা বোর্ডগুলোতে মুসলিম প্রতিনিধিকে সম্প্রদায়গত প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধিত্ব : এতে দাবি করা হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিনেট ও সিন্ডিকেটে মুসলমানদের জন্য আসন সংরক্ষণ (নির্দিষ্ট) করতে হবে।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে,মুসলমানদের স্বার্থগত বিচারে সিমলা ডেপুটেশনকে এক মাইল ফলক বলা যায়। কারণ এ বৈঠকের মধ্যদিয়ে ভারতীয় মুসলমানরা দীর্ঘদিন থেকে তাদের যে বৈষম্যের পাহাড় এর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নিজেদের স্বার্থ আদায়ের পথ সুগম করতে সক্ষম হন।