অথবা, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রবর্তিত আইনে গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলির বিবরণ দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের প্রারম্ভ পর্যায় থেকে প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন চলছিল। ১৯৩০ সালে সাইমন কমিশনের রিপোর্ট ও প্রদেশগুলোতে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদানের সুপারিশ করা হলে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। এ আইনে গভর্নরদের বেশকিছু সীমাহীন ক্ষমতা দেয়া হয়।
গভর্নরের সীমাহীন ক্ষমতা: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনানুযায়ী প্রাদেশিক গভর্নরের হাতে প্রভূত পরিমাণ ক্ষমতা দেয়া হয়।
১. আইনসভার উপর নিয়ন্ত্রণ: এ আইন অনুসারে প্রাদেশিক গভর্নর তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলে আইন পরিষদের নিম্নকক্ষ ভেঙে দিতে পারতেন। আইনসভা প্রণীত বিল গভর্নরের সম্মতির জন্য প্রেরিত হলে তিনি এতে ভোট প্রয়োগ করতে পারতেন অথবা বিলটি গভর্নর জেনারেলের বিবেচনার জন্য সংরক্ষিত রাখতে পারতেন। গভর্নর প্রাদেশিক আইনসভায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে গভর্নরের আইন ও অধ্যাদেশ জারি করতে পারতেন।
২. আইনসভার আর্থিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ: প্রাদেশিক সরকারের আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে গভর্নরগণ আইনসভার উপর প্রাধান্য সৃষ্টি করতে পারতেন। প্রাদেশিক আইনসভা কর্তৃক – বালিতকৃত কোনো ব্যয় বরাদ্ধপূর্ণ বহাল করার ক্ষমতা গভর্নরদের – প্রদান করা হয়েছিল।
৩. মন্ত্রিসভার উপর গভর্নরের নিয়ন্ত্রণ : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রদেশে সংসদীয় ও দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি অনুযায়ী মন্ত্রিসভার হাতেই প্রকৃত শাসনক্ষমতা ন্যস্ত হওয়া উচিত ছিল কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গভর্নর মন্ত্রীদের সাথে পরামর্শ না করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। বিশেষ দায়িত্ব পালনের অজুহাতে গভর্নর মন্ত্রিসভার কোনো পরামর্শ উপেক্ষা করতে পারতেন। অথচ মন্ত্রিসভাকে গভর্নর ও আইনসভা উভয়ের কাছে দায়ী থাকতে হতো। এমনকি গভর্নর মন্ত্রিসভাকে ভেঙেও দিতে পারতেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে যে প্রাদেশিক স্বায়ত্তমাসনের কথা বলা হয় তা ছিল ভারতবাসীর জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু এ ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয়নি। গভর্নর ও মন্ত্রিসভা নিয়ে প্রাদেশিক শাসন বিভাগ গঠিত হলেও গভর্নরের হাতে ছিল প্রভূত ক্ষমতা।