অথবা, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের পটভূমি ও ধারাসমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতের সাংবিধানিক বিবর্তনের ইতিহাসে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ১৯১৯ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছর ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ, রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ এবং ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের ব্যর্থতার ফলশ্রুতি হলো ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন। এ আইনটি পরবর্তী সময়ে ভারতের রাজনৈতিক অগ্রগতি এবং ১৯৪৭সালের ভারতীয় স্বাধীনতা আইনের মূল ভিত্তি রচনা করে।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের পটভূমি: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন ভারতবর্ষে দায়িত্বশীল সরকারও শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। এমনাবস্থায় ভারতীয় জনসাধারণের ক্রমবর্ধমান ক্রোধ, হতাশা ও অসন্তোষ দূর করা এবং তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দাবিদাওয়া পূরণ করার লক্ষ্যে ১৯২৭ সালে ব্রিটিশ সরকার সাইমন-কমিশন নামে একটি কমিশন ভারতবর্ষে প্রেরণ করেন। সাইমন কমিশন ১৯১৯ সালের আইনের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে রিপোর্ট করার লক্ষ্যে ভারতবর্ষে আগমন করে। কিন্তু ভারতের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলই তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৩৩ সালের মার্চ মাসে একটি ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশিত হয়। শ্বেতপত্রভুক্ত প্রস্তাবাবলির ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয় এবং ভারতবর্ষের জন্য নতুন শাসনতন্ত্র প্রণয়নের দায়িত্ব তাদের দেয়া হয়। লর্ড লিনহিনগোর নেতৃত্বে একটি যুক্ত কমিটি ১৮ মাসে ১৫৯ টি বৈঠকে মিলিত হয়ে ১৯৩৪ সালের ২২ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন পেশ করে। এ প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ভারত সচিব স্যামুয়েল হোর করতে শাসন আইন নামক বিল ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৫ কমন্সসভায় উত্থাপিত করেন। ৬ জুন ১৯৩৫ লর্ড সভায় উত্থাপিত হয় এবং ২ আগস্ট ১৯৩৫ সালে তা রাজকীয় অনুমোদন লাভ করে। এটিই ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন নামে খ্যাত।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্য: ভারতবর্ষের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ছিল সবচেয়ে দীর্ঘায়িত একটি দলিল। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ১৪টি অংশ, ১০টি তালিকা এবং ৩২১টি ধারা সংযোজিত ছিল। নিম্নে বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো:
১. সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে একটি সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এ আইনে দেশীয় রাজ্যগুলোর সাথে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশসমূহ যোগ করে একটি সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করা হয় এবং পূর্বের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। আইনে বলা হয় যে দেশীয় রাজ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রে যোগদানের জন্য অন্তর্ভুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করবে। তবে প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের ব্যাপারে দেশীয় রাজ্যগুলোর উপর কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি। তবে বলা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য ৫০% দেশীয় রাজ্য অন্তর্ভুক্তিপত্রে স্বাক্ষর দিলে তা কার্যকরী হবে।
২. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে প্রদেশগুলোতে দ্বৈতশাসন রহিত করে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করা হয়। যার ফলে প্রাদেশিক শাসনে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ হয়ে যায়। কতকগুলো শর্ত সাপেক্ষে জন নির্বাচিত প্রাদেশিক মন্ত্রীসভা প্রাদেশিক বিষয়গুলো পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ করবেন। মন্ত্রীসভা তাদের কাজের জন্য সাংবিধানিক ক্ষমতা অনুযায়ী তার দায়িত্বপালন করবেন। তবে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে তত্ত্বগতভাবে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তিত হলেও বাস্তবে এ স্বায়ত্তশাসন পূর্ণতা লাভকরেনি। কারণ, তখনও প্রাদেশিক গভর্নরের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা ছিল এবং বিচারবুদ্ধি ও স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে তিনি অনেক বিষয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মালিক ছিলেন।
৩. কেন্দ্রে দ্বৈতশাসনের প্রবর্তন: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্রে দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করা হয়। ১৯১৯ সালের আইনে প্রদেশগুলোতে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রদেশগুলোর পরিবর্তে কেন্দ্রে দ্বৈতশাসনের প্রবর্তন করা হয়। কেন্দ্রীয় বিষয়গুলোকে সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত এ দু ভাগে ভাগ করা হয়। সংরক্ষিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রতিরক্ষা পররাষ্ট্র, উপজাতীয় সম্পর্ক ও খ্রিষ্টধর্ম সম্পকীয় বিষয়গুলো। এগুলো পরিচালনার দায়িত্ব গভর্নর জেনারেলের উপর অর্পণ করা হয়। গভর্নর জেনারেল তিন কাউন্সিলারের সাহায্যে এ বিষয়গুলো পরিচালনা করবেন। অন্যদিকে হস্তান্তরিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল আইনশৃঙ্খলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিষয়সমূহ। হস্তান্তরিত বিষয়গুলো গভর্নর জেনারেল ১০ জন মন্ত্রীর সাহায্যে পরিচালনা করবেন। এছাড়া এ আইনে হস্তান্তরিত বিষয়ের উপর আইনসভার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
৪. ক্ষমতা বণ্টন: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে দেশের শাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে তিনটি তালিকায় ভাগ করা হয়। যথা-
(ক) কেন্দ্রীয় তালিকা: কেন্দ্রীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, মুদ্রা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যাংক, বীমা, ডাক, তার প্রভৃতি মোট ৫১ টি বিষয়।
(খ) প্রাদেশিক তালিকা: প্রাদেশিক তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল আইনশৃঙ্খলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনহিতকর কার্য, কৃষি, ভূমি, রাজস্ব, কারাগার, ব্যবসায় বাণিজ্য ও শিল্প এবং স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসন ইত্যাদি।
(গ) যুগ্ম তালিকা: যুগ্ম তালিকায় বিষয়সমূহের উপর প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ আইন প্রণয়ন করতে পারত। কিন্তু অবশিষ্ট বা তালিকা বহির্ভূত ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয় যে, গভর্নর জেনারেল নিজের ইচ্ছামত কোনো বিষয়কে কেন্দ্র বা প্রদেশের হাতে অর্পণ করতে পারবেন। এ শর্তে আরও বলা হয় যে, কোনো প্রাদেশিক আইন কেন্দ্রীয় আইনের বিরোধী হলে পূর্বোক্ত আইন বাতিল হয়ে যাবে।
৫. দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রবর্তন: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্রে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রবর্তন করা হয়। উচ্চকক্ষের নাম রাষ্ট্রীয়সভা এবং নিম্নকক্ষের নাম যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনসভা। এ আইনে বলা হয় যে, ২৬০ জন সদস্য নিয়ে একটি রাষ্ট্রীয়সভা গঠিত হবে। এর মধ্যে দেশীয় রাজ্যগুলো থেকে ১০৪ জন প্রতিনিধি আসবেন এবং ১৫৬ জন প্রতিনিধি আসবেন ব্রিটিশ ভারত থেকে, যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনসভা ৩৭৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। এদের মধ্যে ১২৫ জন দেশীয় রাজ্যগুলো হতে এবং ২৫০ জন প্রদেশগুলো থেকে আসবেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনসভার কার্যকালের মেয়াদ হবে ৫ বছর। তবে গভর্নর জেনারেল ইচ্ছা করলে কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আইনসভা ভেঙে দিতে কিংক্ষা মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে পারবেন। তবে এ আইনে বলা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনসভা ইংল্যান্ড রাজ্যের অধিকার, সামরিক বিষয়, বড় লার্টের অর্ডারস হর্ন কাউন্সিল প্রভৃতি বিষয়ে কোনো আইন পাস করতে পারবে না।
৬. যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত ব্যবস্থা: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। একজন প্রধান বিচারপতি ও দুজন সাধারণ বিচারপতি নিয়ে এ আদালত গঠিত হবে। শাসনতন্ত্রের ব্যাখ্যা দান এবং কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে তার অবসান করা ছিল এ আদালতের প্রধান দায়িত্ব।
৭. উপদেষ্টা পরিষদ গঠন: ১৯৩৫ সালের আইনে ইংল্যান্ডস্থ ভারত সচিবের কাউন্সিলের অবসান করে তদস্থলে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। এ আইনে ভারত সচিবের ক্ষমতা কমিয়ে ভারত সরকারের হাতে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।
৮. মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব: এ আইনে আইন পরিষদে সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক স্বতন্ত্র নির্বাচন প্রথা বহাল রাখা হয় এবং গুরুত্ব অনুসারে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এতে বলা হয় যে, কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলমানদের জন্য অংশ প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
৯. সংবিধান সংশোধন: ১৯৩৫ সালের শাসন আইনে প্রণীত সংবিধান ছিল অনমনীয় এবং দুষ্পরিবর্তনীয়। ভারতের কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক আইনসভার সংবিধান সংশোধনের কোনো ক্ষমতা ছিল না। এ আইনে একমাত্র ব্রিটিশ সরকারের হাতেই সংবিধান সংশোধিত করার ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।
১০. নতুন প্রদেশ সৃষ্টি: ভারত শাসন আইনে বার্মাকে ভারত হতে পৃথক করা হয়। ফলে বার্মা একটি স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে আত্ম্যপ্রকাশ করে। এছাড়াও সিন্ধু ও উড়িষ্যা নামে দুটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়।
১১. গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা বৃদ্ধি: এ আইন দ্বারা গভর্নর জেনারেলকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা হয়। শাসন বিভাগের সবক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন একচ্ছত্র অধিপতি। এ আইনে গভর্নর জেনারেলকে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ও বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ফলে তিনি একজন স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হন। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু তদানীন্তন গভর্নর জেনারেলকে নাৎসী নায়কে হিটলারের সাথে তুলনা করেন।
সমালোচনা: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ফিল কারী পদক্ষেপ। তবে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলেও এটি সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিল না। এ আইনের সমালোচনা করে জাতীয় কংগ্রেস। কংগ্রেসের মতে, এ আইনটি ভারতে সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ, কংগ্রেস এর সভাপতি পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু এ আইন সম্পর্কে বলেছেন, The new indian constitution was a machine with strong brake ভারতবর্ষের শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য একটি যুগান্ত সমালোচনা করে বলা হয়। The scheme of 1935 was thoroughly rotten fundamentally bad and totally unacceptable. পণ্ডিত M.M. Malaviya বলেছেন, নতুন আইন আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বাহ্যিকভাবে এটি কিছুটা গণতান্ত্রিক প্রকৃতির হলেও ভিতর থেকে এ আইনটি ছিল সম্পূর্ণরূপে ফাঁপা। এ সম্পর্কে মি. এটলি বলেছেন, নয়া আইনের মূল ধারা হচ্ছে অনাস্থা। সুতরাং এ আইনটি ছিল হতাশাব্যঞ্জক। and no engine. মুসলিম লীগের পক্ষ থেকেও এ আইনের
এ আইনের সমালোচনায় বলা হয় যে, এ আইনে ফেডারেশন গঠনের প্রস্তাবিত কাঠামোটি ত্রুটিমুক্ত ছিল না। ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় বিধিগুলো কার্যকরী হতে পারেনি, এ অবস্থায় দেশীয় রাজ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রে যোগদানে ভয় পায়। কারণ তাদের ভয় ছিল যে, আইনসভায় কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোটের জোরে দেশীয় রাজ্যসমূহের রাজাদের ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারে। এছাড়া অনেকের অভিযোগ যে, আইনসভার প্রতিনিধিরা ছিলেন রানী কর্তৃক মনোনীত। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে ভারতীয়দের অনেক সুবিধার কথা বলা হয়, কিন্তু ডমিনিয়ন স্টেটার্স দানের কথা বলা হয়নি। এতে যে সংবিধান গঠন করা হয় তা ছিল দুষ্পরিবর্তনীয়। তবে ভুল যে এতে সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তনের কথা বলা হয়নি। এছাড়া যদিও সমালোচনাকালীন অবস্থার প্রেক্ষাপটে গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু গভর্নর জেনারেলকে এত বেশি ক্ষমতা দেয়া ঠিক হয়নি।
এভাবে দেখা যায় যে, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা বাস্তবে তেমন কার্যকরী হয়নি। তাই তা ব্যর্থ হয়।
১৯৩৫ সালের আইনে কি দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল: ভারতবাসীর দাবি ছিল দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করার মাধ্যমে ভারতীয় আপামর জনসাধারণের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত করে দিতে হবে। কিন্তু এটা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছিল ১৯৩৫ সালের আইনে তা বিবেচ্য বিষয়। ভারতবর্ষের ইতিহাসে দেখা যায় দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ইতোপূর্বে ১৯০৯ সালের আইনে বলা হয়েছিল। যখন এ আইনে ব্যর্থ হয় তখন ১৯১৯ সালের আইনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ১৯৩৫ সালের আইনে দেখা যায় যে, প্রদেশের পরিবর্তে কেন্দ্রে দ্বৈতশাসনের প্রবর্তন করা হয়। এছাড়া এতে শাসন ক্ষমতা কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক ও যুগ্ম বিষয়ের মাধ্যমে ভাগ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে দেখা যায়, এখানে যে আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয় তার ক্ষমতা ছিল সীমিত। এছাড়া ভারত সচিব এর পদ বাতিল করে যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয় তা তেমন সফল হয়নি। মুসলমানদের জন্য যে প্রতিনিধিত্ব দেয়া হয় তা ছিল কেবল কলমের লিখনীর মাঝে সীমাবদ্ধ। এখানে আইনে সভার যে বিভাজন তা ছিল অনেকটা বেশি পরিমাণে। এজন্য দেখা যায় এগুলো বাস্তবে প্রকৃত কার্য সফল করতে ব্যর্থ হয়। এছাড়া দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে নিয়ন্ত্রণকর্তা বা গভর্নর জেনারেল ছিলেন তিনি ছিলেন নামেমাত্র। তবে গভর্নর জেনারেলকে এত বেশি ক্ষমতা দেয়া হয় যে তিনি স্বেচ্ছাচারী হয়ে যান। যার জন্য ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে বড় বড় বুলির কথা বলা হলেও তা বাস্তবে কার্যকর করা নিয়ে নানা সমস্যা ছিল। সুতরাং ১৯৩৫ সালের আইনে এ ব্যবস্থার প্রবর্তন করা সম্ভব হয়নি।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতবাসীর দাবি পূরণের জন্য ১৯৩৫ সালে যে আইন পাস করা হয় তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে দেখা যায় যে, এতে যে সকল শর্তের কথা বলা হয় তা ছিল অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, বাস্তবক্ষেত্রে এগুলোর প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে এ আইন তেমন বেশি ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তবে আইনটি সমকালীন অবস্থায় ভারতের জন্য মূল্যবান ছিল বলা যায়।