১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের পটভূমি সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ব্যাখ্যা দাও।

উত্তর: ভূমিকা: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন স্বভাবতই ভারতীয়দের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ফলে ভারতে এই বিষয়ে আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সংবিধানের কাঠামো নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা শুরু হয়েছিল। ভারতীয়দের মনোভাবের কারণে ব্রিটিশ সরকারও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করে। ভারতীয়দের সাথে একাধিক আলোচনা এবং বিভিন্ন কমিশন নিয়োগের মাধ্যমে নানা ধরনের সংস্কারের সম্ভাব্যতা যাচাই করে ১৯৩৫ সালের ২ আগস্ট নতুন ভারত শাসন আইন জারি করা হয় যা ইতিহাসে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন নামে খ্যাত।

পটভূমি: নিচে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের পটভূমি আলোচনা করা হলো:

১. ভারতীয়দের উদ্যোগ: ভারতীয়দের উদ্যোগে প্রদত্ত প্রস্তার যেমন নেহরু রিপোর্ট বা ব্রিটিশ সরকারের সাইমন কমিশন রিপোর্ট কিংবা গোল টেবিল বৈঠকের মতো প্রয়াস সমূহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে বিটিশ সরকার অনেকটা একক উদ্যোগ নতুন শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতি প্রণয়ন ও প্রবর্তনের পথে অগ্রসর হয়। সে লক্ষ্যে ১৯৩৩ এর মার্চ মাসে শ্বেতপত্র (Whitepaper) নামে সাংবিধানিক বা শাসনতান্ত্রিক ভবিষ্যতের একটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়। রূপরেখা অনুসারে কেন্দ্রে দ্বৈতশাসন এবং প্রদেশে একটি ক্ষুদ্র আকারের দলিল প্রকাশ করেন। দলিলটিতে ভারতীয় দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। কিন্তু ভারতীয়রা এই বিষয়ে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেও ব্রিটিশ সরকার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে।

২. জয়েন্ট সিলেক্ট কমিটি গঠন: ১৯৩৩ এর এপ্রিল মাসে একটি জয়েন্ট সিলেক্ট কমিটি গঠন করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল। শ্বেতপত্র পরীক্ষা করা ও প্রয়োজনীয় প্রস্তাব তৈরি করা। লর্ড সভা এবং কমন্স সভার সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠন করা হয় এই কমিটি। কমিটি প্রধান ছিলেন লর্ড লিনলিথগো।

৩. বিভিন্ন যাচাই বাছাই : কমিটি ভারতীয় প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে এছাড়া ব্রিটিশ ইন্ডিয়া ডেলিগেশন এবং ইন্ডিয়া আসোসিয়েশনের প্রদত্ত মেমোরেন্ডাম পরীক্ষাসহ বিভিন্ন যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৯৩৪ এর ২২ নভেম্বর কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন যাচাই বাচাইয়ের পর ১৯৩৪ এর ২২ নভেম্বর কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করেন। রিপোর্ট শ্বেতপত্রের নির্দেশনা মেনে চলা হলেও বেশকিছু পরিবর্তনের প্রস্তাবও দেয়া হয়।

৪. বিল পাশ: সিলেক্ট কমিটির প্রস্তাব বিস্তারিত আলোচনার পর একটি খসড়া বিল প্রস্তুত করা হয়। বিলটি ১৯৩৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কমন্স সভায় পেশ করা হয়। পেশ করেন ভারত সচিব স্যার স্যামুয়েল হোর। ১৯৩৫ এর জুন মাসের ৪ তারিখে কমন্স সভায় পাস হয়ে ৬ জুন লর্ড সভায় উপস্থাপনের পর এটি জুলাইতে লর্ড সভায় পাস হয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ সরকার অনুধাবন করতে পেরেছিল যে, ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে আর দেশ পরিচালনা বা ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়, নতুন প্রেক্ষাপটে একটি ইতিবাচক আইন পাস এ করা দরকার। এরই ফলশ্রুতিতে প্রণীত হল ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন।