অথবা, ১৯৪৭ সালে ভারত কেন বিভক্ত হয়?
অথবা, ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের কারণ কী কী?
উত্তর। ভূমিকা: ভারতীয় উপমহাদেশের শাসনতান্ত্রিক অগ্রগতির ইতিহাসে ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এ আইন একটি পর্যায়ের সমাপ্তি ও অন্য একটি পর্যায়ের সূচনা করে। ১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই এ আইন কমলসভায় এবং ১৫ জুলাই লর্ড সভায় পাস হয়। ১৮ জুলাই ১৯৪৭ সালে রাজকীয় সম্মতির মাধ্যমে ভারত স্বাধীনতা বিলটি আইনে পরিণত হয়। এর মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে।
ভারত বিভক্তির প্রেক্ষাপট: নিচে ভারত বিভক্তির প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হলো:
১. আগস্ট প্রভাব (১৯৪০): ব্রিটিশ সরকার ১৯৪০ সালে ভারতকে ডোমিয়নের মর্যাদা প্রদান সংবলিত একটি প্রস্ত বে প্রদান করে। এটি আগস্ট প্রস্তাব নামে সমধিক পরিচিত। কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া ছাড়া যে কোন প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এ প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে। অন্যদিকে, মুসলিম লীগ এ প্রস্তাবের বিরোধিতা বা সমর্থন কোনোটি না করে বরং পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি করে।
২. ১৯৪২ সালের ত্রিপস প্রস্তাব: ১৯৪২ সালের ৩০ মার্চ ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হবে এরূপ প্রস্তাব সংবলিত একটি প্রস্তাব ভারতীয় নেতৃবৃন্দের নিকট উত্থাপন করেন। মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস উভয় দলই এ প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে, ফলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
৩. ১৯৪৫ সালের ওয়াভেল পরিকল্পনা: দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষদিকে ১৯৪৫ সালে জাপানের সাথে যুদ্ধ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের সহযোগিতা ও ভারতের অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলার জন্য লর্ড ওয়াভেল এক পরিকল্পনা পেশ করেন। এটা ওয়াভেল পরিকল্পনা নামে পরিচিত। ১৯৪৫ সালের ২৫ জুন থেকে ১৪ জুলাই ওয়াভেল এ ব্যাপারে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেন। কিন্তু ভারতীয় নেতৃবৃন্দের প্রবল বিরোধিতার ফলে এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
৪. ১৯৪৭ সালের মাউন্ট ব্যাটেন পরিকল্পনা: ভারত বিভক্তি চূড়ান্ত করতে ও ভারত পাকিস্তান দুটি পৃথক রাষ্ট্র সৃষ্টির উদ্দেশ্যে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ৩ জুন ১৯৪৭ সালে এক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এর মাধ্যমে ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন প্রণীত হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মতানৈক্য ও পারস্পরিক অবিশ্বাস ভারত বিভক্তির বীজ বপন করেছিল। এর চূড়ান্ত পরিণতি ঘটেছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট ভারত নামক দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি।