১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে শহিদদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি লিখ।

অথবা, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে শহিদদের পরিচয় দাও।

উত্তরা। ভূমিকা: ভাষা আন্দোলন বাঙালির জাতীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল তা শেষ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়। ভাষা আন্দোলন ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালিদের প্রথম সংগ্রাম। এ আন্দোলনের মাধ্যমে যে চেতনাবোধ জাগ্রত হয় তা পরবর্তী আন্দোলনগুলোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ভাষা আন্দোলনের জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ ও জীবন উৎসর্গ ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ও বিরল ঘটনা। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে শহিদদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: নিচে ভাষা আন্দোলনে শহিদদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

১. শহিদ রফিকউদ্দিন আহমদ: ভাষা আন্দোলনে প্রথম শহিদ হন রফিকউদ্দিন আহমদ। ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর রফিকউদ্দিন মানিকগঞ্জের পারিল তলধারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রফিকউদ্দিন আহমদ পেশায় ছিলেন কমার্শিয়াল প্রেস পরিচালক। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে মিছিলরত অবস্থায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনি নিহত হলে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। রফিকউদ্দিন আহমদকে ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

২. শহীদ আবুল বরকত শহিদ আবুল বরকত ১৩ জুন ১৯২৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তালিবপুর হাইস্কুল থেকে তিনি ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিক এবং বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ১৯৪৭সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে তিনি ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। ভাষা আন্দোলনে নিহত হওয়ার সময় তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান এম.এ এর ছাত্র ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১০ টার সময় তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। ২০০০ সালে ভাষা শহিদ বরকতকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়।

৩. শহিদ আব্দুল জব্বার: ভাষা আন্দোলনে আর একজন শহিদ হলেন আব্দুল জব্বার। ১৯১৯ সালে ময়মনসিংহ জেলার পড়ুয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় ছিলেন একজন দর্জি। আব্দুল জব্বারকে আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়। ২০০০ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন।

৪. শহিদ শফিউর রহমান: শহিদ শফিউর রহমান ২৪ জানুয়ারি ১৯১৮ সালে কোন্নগর, চব্বিশ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গে জনন্মগ্রহণ করেন। তিনি হাইকোর্টের হিসাবরক্ষণ শাখার কেরানি ছিলেন। ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি শহিদ হন। তাকে আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়। ২০০০ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়।

৫. শহিদ আব্দুস সালাম: ১৯২৫ সালে লক্ষ্মণপুর গ্রামে, ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল সালাম। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হন এবং মৃত্যুবরণ করেন ১৯৫২ সালের ৭ এপ্রিল। তিনি সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগে পিয়নের চাকরি করতেন। ২০০০ সালে তাকেও মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।

৬. শহিদ আব্দুল আউয়াল: আব্দুল আউয়াল ২১ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিলে হাইকোর্টের সামনে পৌছালে পুলিশ বাহিনীর গাড়ির চাপায় তার মৃত্যু হয়।

৭. শহিদ অহিউল্লাহ: বালক অহিউল্লাহ মাত্র ৮ বছর বয়সে বাংলা ভাষার জন্য শহিদ হন। তিনি তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তেন। ২২ ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডে খোশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে গুলি লেগে নিহত হন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মিছিল কালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় রফিক, শফিক, জব্বার, বরকতসহ অনেকে। তাদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি যে অনুপ্রেরণা লাভ করে তা শেষ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়।