১৯৬২ সালের ফাইন্যান্স কমিটি কী, কেন গঠন করা হয়?

অথবা, ১৯৬২ সালের ফাইন্যান্স কমিটি কী? গঠনের কারণ কী ছিল?

উত্তরঃ ভূমিকা: ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিমা শাসকগণ পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চাদপদ ভূমিতে পরিণত করে। তাদের বৈষম্য পূর্ব বাংলার অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। যেমন- সম্পদের বণ্টনে বৈষম্য, উন্নয়ন প্রকল্পে বৈষম্য, মাথাপিছু আয়ে বৈষম্য, রপ্তানি ও আমদানি আয়ব্যয়ে বৈষম্য, রাজস্ব আয়ব্যয়ে বৈষম্য প্রভৃতি পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য এতই প্রকট ছিল যে তখন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগণ তা মেনে নিতে বাধ্য হয়।

ফাইন্যান্স কমিটি কি এবং কেন গঠিত হয়: ১৯৪৭ সালের পর থেকেই মূলত পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীরা পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টিতে তৎপর ছিল। ১৯৬০ এর দশকে এ বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে এবং বাঙালি অর্থনীতিবিদগণ এ নিয়ে সমালোচনা শুরু করে। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান পূর্ব বাংলা সফরে আসেন সেখানে একটি অধিবেশনে পূর্ব বাংলার অর্থনীতিবিদের চাপের মুখে আইয়ুব খান পূর্ব বাংলার প্রতি বৈষম্যের কথা স্বীকার করেন এবং এ বৈষম্য নিবসনের জন্য ১৯৬২ সালে একটি ‘ফাইন্যান্স কমিটি’ গঠন করেন। এ কমিটি সেই সালেই তার রিপোর্ট পেশ করে এবং দুই অঞ্চলের জনসংখ্যার ভিত্তিতে সম্পদ বিভাজনের উপদেশ দেন কিন্তু তা বরাবরের মতোই ব্যর্থ হয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মূলত পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব বাংলাকে দমন করার জন্যই খুব পরিকল্পিতভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং তারা এ বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি বা দু’একটি কমিটি গঠনের কথা বলে বাঙালিদের অসন্তোষকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, কিন্তু কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাদের এ অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণেই বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।