৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের প্রধান প্রধান দিক কী ছিল? আলোচনা কর।

অথবা, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের রাজনৈতিক তাৎপর্য কী ছিল আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ একটি ঐতিহাসিক ভাষণ। ৭ মার্চ ভাষণের জন্য বঙ্গবন্ধু ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। মুক্তি সংগ্রামের দিকনির্দেশনামূলক এ ভাষণ সমগ্র পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ ১০ লাখ লোক জমায়েত হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ভাষণ ইতঃপূর্বে কোনো নেতা দিয়েছেন বলে জানা যায় না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ ভাষণ গণতন্ত্রের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তেমনি ভাবে ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী মানুষের নিকট অমর হয়ে থাকবে।

৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের প্রধান প্রধান দিক নিচে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের প্রধান দিকগুলো আলোচনা করা হলো:

১. মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা প্রদান: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য সঠিক দিকনির্দেশনার সন্ধান দেয়। যা স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ প্রশস্ত করেছিল। বাংলার মুক্তি না আসা পর্যন্ত সকল খাজনা ট্যাক্স বন্ধ করতে বলেন। স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখতে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অবিলম্বে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেন।

২. পরোক্ষ স্বাধীনতার ঘোষণা : বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলো। তিনি বলেন, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রামের স্বাধীনতার সংগ্রাম”। যা ছিল স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা।

৩. মুক্তির বাণী প্রদান: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে মুক্তির বাণী প্রচার করেন। তিনি বাঙালি জনগণের মুক্তির জন্য ঘোষণা করেন যে, “ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।”

৪. প্রতিরোধের ডাক: ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক’। তিনি সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খল থেকে বাঙালিদের মুক্তির প্রতিরোধের
ডাক দেন।

৫. সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি: ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে
হুশিয়ারি প্রদান করেন। ১০ মার্চ ঢাকায় ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু তা প্রত্যাখ্যান করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামরিক সরকারের উপর কতকগুলো শর্ত আরূেপ করেন। যথা:

ক. সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে।

খ. সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে।

গ. সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরীহ ও নিরস্ত্র পৌঁককে হত্যার তদন্ত করতে হবে।

ঘ. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এভাবে তিনি সামরিক সরকারের প্রতি অনাস্থা আপন করেন।

৬. অসহযোগ আন্দোলনকে সফল করতে দিকনির্দেশনা: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের অন্যতম দিক ছিল অসহযোগ আন্দোলনকে আরো বেশি কার্যকর করা। এজন্য তিনি বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। যথা:

ক. বাংলার মুক্তি না আসা পর্যন্ত সকল খাজনা ট্যাক্স বন্ধ রাখতে হবে।

খ. দেশের সমস্ত সরকারি আধা সরকারি অফিস আদালত বন্ধ থাকবে।

গ. স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।

ঘ. প্রতিটি ইউনিয়ন, মহল্লা, থানা, মহকুমা এবং জেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হবে।

ঙ. টেলিফোন, টেলিগ্রাম কেবল বাংলাদেশের ভিতরই চালু থাকবে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের আলোকবর্তিকা স্বরূপ। ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের সবুজ সংকেত। বাস্তব পরস্থিতিতে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া সম্ভব ছিল না বলে বঙ্গবন্ধু পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মুক্তি যুদ্ধে ৭ মার্চের ভাষণ মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল।