বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠায় এলাহাবাদ সন্ধির গুরুত্ব সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠায় এলাহাবাদ সন্ধির তাৎপর্য উল্লেখ কর।

অথবা, বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠায় এলাহাবাদ সন্ধির গুরুত্ব কী ছিল?

অথবা, বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠায় এলাহাবাদ সন্ধির গুরুত্ব সম্বন্ধে কী জান?

উত্তর: ভূমিকা: কোম্পানির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা চিন্তা করে ক্লাইভ দিল্লির সম্রাট শাহ আলম এবং অযোধ্যার সুজাউদ্দৌলার সঙ্গে মিত্রতা নীতি অনুসরণ করেন। ক্লাইভ প্রথমে ১৭৬৫ সালের আগস্ট মাসে অযোধ্যার নবাবের সঙ্গে এলাহাবাদের চুক্তি করেন। এলাহাবাদের সন্ধিতে রবার্ট ক্লাইভের অসাধারণ বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়। ফলে কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি বা রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা লাভ করেন।

বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠায় এলাহাবাদ সন্ধির গুরুত্ব: বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠায় এলাহাবাদ সন্ধির গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. বাংলায় কোম্পানির বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠা: বল প্রয়োগের পরিবর্তে এলাহাবাদের চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানি মুঘল সম্রাটের ফরমান লাভ করেন। বাংলা কোম্পানির বৈধ ক্ষমতায় পরিণত হয়। এর ফলে বাংলা সরাসরি কোম্পানি শাসনের অধীনে চলে যায়।

২. বাংলায় কোম্পানির পূর্ণ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা: এলাহাবদের চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভ করার ফলে বাংলায় কোম্পানির পূর্ণ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা হয়। মীর জাফরের পুত্র নাজিমুদ্দৌলাকে নামে মাত্র সিংহাসনে রেখে কোম্পানিই সকল ক্ষমতার অধিকারী হন।

৩. সমগ্র বাংলার রাজস্ব লাভ : এতদিন কোম্পানি মীর জাফর ও মীর কাসিমের সাথে চুক্তি করে বর্ধমান, মেদিনীপুর, চট্টগ্রাম ও ২৪ পরগনার রাজস্ব ভোগ করত। এলাহাবাদ চুক্তির পর তারা গোটা বাংলা তথা বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্বের অধিকার হয়।

৪. দ্বৈতশাসন প্রতিষ্ঠা: দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের নিকট হতে দেওয়ানি লাভ করে এবং বাংলার নবাবকে বৃত্তিভোগীতে পরিণত করে ক্লাইভ বাংলাদেশে দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করেন। এই শাসন ব্যবস্থা অনুযায়ী ক্লাইভ বাংলায় নবাবের উপর বিচার ও শাসন বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং প্রতিরক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করেন কোম্পানির উপর। এর ফলে নবাব পেলেন ক্ষমতাহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি লাভ করলেন দায়িত্বের ক্ষমতা। এই অদ্ভুত ব্যবস্থা ‘দ্বৈতশাসন’ নামে পরিচিত। সাং

৫. দেওয়ানি লাভের প্রভাব : কোম্পানির বিনা অনুমতিতে নবাব রেজা খানের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ বা তাকে পদচ্যুত করতে পারবেন না। সুতরাং রেজা খানের মাধ্যমে বাংলার শাসন ক্ষমতা ইংরেজরা ক্লাইভের ভারতে আগমনের পূর্বেই হস্তগত করে এবং নবাব নাজিমুদ্দৌলাকে সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতাহীন করে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় ক্লাইভ বাংলাদেশে এসে নবাবের সাথে দ্বিতীয় এক চুক্তি সম্পাদন করেন। এভাবে ক্লাইভ সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে দেওয়ানি লাভ করেন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, এলাহাবাদ চুক্তি বাংলার কোম্পানির সর্বশেষ পর্ব ছিল। এ পর্বে যাবতীয় নাটক মঞ্চস্থ করেন লর্ড ক্লাইভ। এজন্য ১৭৬৫ সালের দেওয়ানি লাভকে বাংলায় মুঘল যুগ ও ব্রিটিশ যুগের Dividing Live বলে মনে করা হয়।