দেওয়ানি কি?

অথবা, দেওয়ানি বলতে কি বুঝ?

অথবা, দেওয়ানি সম্পর্কে তোমার মতামত ব্যক্ত কর।

অথবা, দেওয়ানি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: বাংলার ধনসম্পদ ও ঐশ্বর্যের কাহিনী যুগে যুগে বিদেশি পর্যটক ও বণিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তাদের কেউ পর্যটনের উদ্দেশ্যে এদেশে এসেছিল। তারা এদেশে দীর্ঘদিন বসবাসের ফলে তাদের উদ্দেশ্যের পরিবর্তন ঘটে এবং তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা নিজ হাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে প্রথমে ১৭৫৭ সালে ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ভিত্তি স্থাপন করেন। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ শক্তির পরিচয় দেন এবং ১৭৬৫ সালে বাংলা, বিহার এর দেওয়ানি লাভ করে।

দেওয়ানি: দেওয়ানি কি সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে হলে মুঘল শাসন ব্যবস্থার দু-একটি বৈশিষ্ট্যের কথা মনে রাখা দরকার। মুঘল আমলে সম্রাটের প্রতিনিধিরূপে বাংলার সুবাদার দুই রকমের সুবিধা ভোগ করতেন। একটি দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের অধিকার ও রাজস্ব সংক্রান্ত মামলার বিচার এবং অপরটি নিজামত অর্থাৎ সামরিক ও আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষমতা। ১৭৬৫ সালের আগেও দিল্লির দরবার কোম্পানিকে দেওয়ানী দিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে কোম্পানির প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। এ অবস্থায় কোম্পানির সামনে দেওয়ানী গ্রহণ করা ছাড়াও অন্য পথ খোলা ছিল না। কিন্তু কোম্পানি দেওয়ানি লাভকরলেও দেওয়ানী শাসনের দায়িত্ব নিজেদের হাতে না রেখে । বাংলার নায়েব নাজিম রাজস্ব বিশারদ মুহাম্মদ রেজা খানের উপর ন্যস্ত করেন। ইতোপূর্বে বাংলার নিজামত শাসনের ভার নাবালক নবাব নাজিম-উদ-দৌলার অভিভাবক হিসেবে নায়েম নাজিম রেজা – খানের উপর ন্যস্ত হয়। রেজা খানই ছিলেন নবাব ও কোম্পানির প্রতিনিধি। দেওয়ানি লাভের পর কোম্পানির সঙ্গে রেজা খানের চুক্তি হয় যে, রাজস্ব সংগ্রহ করে সমস্ত খরচ মিটিয়ে উদ্বৃত্ত রাজস্ব কোম্পানিকে প্রদান করবে। এভাবে বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। অর্থাৎ বাংলার শাসন ব্যবস্থা কোম্পানি ও রেজা খানের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৬৫ সালের দেওয়ানি লাভের মধ্য দিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলা তথা ভারতবর্ষে বিজয়ের পথ সুপ্রশস্ত হয়ে যায়। বস্তুত ১৬৫১ সালে শাহ সূজা কোম্পানিকে বাণিজ্যিক সুবিধা দেবার যে সনদ দান করেন তারই শেষ পরিণতি ছিল ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক দেওয়ানি লাভ।