অথবা, দ্বৈতশাসনের প্রকৃতি সম্পর্কে লিখ।
অথবা, দ্বৈতশাসনের প্রকৃতি বলতে কী বুঝ?
উত্তর: ভূমিকা: পলাশি ও বক্সারের যুদ্ধে জয় লাভ এবং ক্লাইভ কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া এলাহাবাদ চুক্তি ও দেওয়ানি লাভের ফলে বাংলায় দ্বৈতশাসনের উদ্ভব হয়। এর ফলে নবাবকে হাতের পুতুল বানিয়ে সামরিক ও রাজস্ব ক্ষমতা হস্ত-গত করে। পক্ষান্তরে ক্ষমতাহীন নবাবের উপর আইন-শৃঙ্খলা, বিচার, প্রশাসন প্রভৃতি দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়। দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার কূফল বাংলার শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধিকে ধ্বংস করে ফেলে।
দ্বৈতশাসনের প্রকৃতি: রবার্ট ক্লাইভ কর্তৃক ১৭৬৫ সালে প্রবর্তিত দ্বৈতশাসনের প্রকৃতি ছিল নিম্নরূপ:
১. শাসনকার্যের বিভাজন: দ্বৈতশাসনের মাধ্যমে বাংলার শাসন ক্ষমতাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(ক) নিজামতির দায়িত্ব: দ্বৈতশাসনের মাধ্যমে বাংলার নবাবকে আইন-শৃংখলা, বিচার ব্যবস্থার দায়িত্ব দেওয়া হয়। নবাবকে রাজস্ব বিভাগের দায়িত্ব না দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে অচল করে রাখে। নবাবের হাতে থাকে অর্থহীন ক্ষমতা। ফলে ক্ষমতাহীন নবাব নিজামতির দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। চকামার
(খ) সামরিক ও রাজস্বের দায়িত্বঃ- দ্বৈতশাসনের মাধ্যমে নবাবকে হাতের পুতুল বানিয়ে রবার্ট ক্লাইভ সামরিক ও রাজস্বের দায়িত্ব নিজের হাতে রাখে। এর ফলে রাষ্ট্রের কোনো ক্ষমতা কোম্পানি গ্রহণ না করে প্রশাসনের মূল ক্ষমতা তথা অর্থনৈতিক ক্ষমতা দখলে রাখে।
২. নায়েব নাজিম নিয়োগঃ ১৭৬৫ সালে ইংরেজরা নবাব নাজমুদ্দৌলার সাথে চুক্তি করে যে, বাংলার সম্পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে | নায়েবে নাজিম উপাধিকারী একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার হাতে।
তার নিয়োগ বা অপসারণের পুরো ক্ষমতা থাকবে ইংরেজদের হাতে। কোম্পানি রেজা খানকে নায়েব দেওয়ান নিযুক্ত করেন। বাংলার ২৪টি জেলার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব রেজা খান ও সিতাব রায়কে দেয়া হয়।
৩. আমিল প্রথার উদ্ভবঃ ২৪টি জেলা থেকে নায়েব নাজিমরা আমিলের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করার ব্যবস্থা করেন। রেজা খান বিভিন্ন আমিলদের সঙ্গে রাজস্বের পরিমাণ সম্পর্কে চুক্তি করে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব তাদের হাতে ছেড়ে দেন। আমিলরা জেলার যে জমিদার সর্বাধিক রাজস্ব দেওয়ার স্বীকৃতি দিত তাকে দায়িত্ব দিত। ফলে জমিদাররা ইজাদারে পরিণত হয়। যেহেতু আমিলদের চাকরির মেয়াদ ছিল স্বল্পস্থায়ী এবং যথেষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের উপর নির্ভরশীল, সেহেতু তারা লুন্ঠন শুরু করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য একটি সাংবিধানিক মুখোশ। কারণ নবাবের হাতে কাগজে-কলমে নিজামতির দায়িত্ব থাকলেও হাতে কলমে তা নায়েব নাজিম রেজা খানের হাতে থাকে। অর্থাৎ সকল ক্ষমতা ইংরেজদের হাতে চলে যায়। ইংরেজদের দাসানু-দাস রেজা খান রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলার জনগণের স্বার্থরক্ষায় উদাসীনতা দেখান। ফলে বাংলার জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। তাই বলা যায় দ্বৈতশাসনের চূড়ান্ত পরিনাম ছিল বাংলার ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ধ্বংসলীলা।