অথবা, দ্বৈত শাসনের রাজনৈতিক প্রভাব সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, দ্বৈত শাসনের রাজনৈতিক ফলাফল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
অথবা, দ্বৈত শাসনের রাজনৈতিক প্রভাব এর আলোকে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভূমিকা: রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা ফলপ্রসূ হয়নি। এ ব্যবস্থা অনুযায়ী নবাবের দায়িত্ব ছিল কিন্তু কোন ক্ষমতা ছিল না। ফলে প্রয়োজনের সময় ক্ষমতা ও অর্থের অভাবে নবাব কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন না। কর্তৃত্বের এরূপ বিভাজন বাস্তব ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে না। তাই এ শাসন ব্যবস্থার ফলে বাংলার জনসাধারণ চরম দুর্দশার মধ্যে নিপতিত হয়।
দ্বৈত শাসনের রাজনৈতিক ফলাফল/প্রভাব: বাংলার জনসাধারণের রাজনৈতিক জীবনে দ্বৈত শাসনের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:
১. কোম্পানির নিজস্ব ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা: দেওয়ানী লাভের পর দেশের সমস্ত ক্ষমতা ইংরেজদের হাতে চলে যায়। কেননা রাজ্যের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব কোম্পানির সেনাবাহিনী ও রাজ্যের রাজনৈতিক প্রভূত ক্ষমতা কোম্পানির কর্মচারীদের হাতে চলে যায়।
২. নবাবের ক্ষমতাহীন দায়িত্ব: দ্বৈতশাসন ব্যবস্থায় নবাবের দায়িত্ব ছিল কিন্তু কোনো ক্ষমতা ছিল না। অর্থের জন্য তাকে কোম্পানির দয়ার উপর নির্ভর করতে হয়েছিল। এ কারণে নবাব প্রয়োজনের সময় ক্ষমতা ও অর্থের অভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারতেন না। তিনি ছিলেন পরিস্থিতির একজন নীরব দর্শক মাত্র।
৩. শাসনের নামে প্রশাসন: দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে কোম্পানি এদেশে শাসনের নামে প্রশাসন পরিচালনা করেছে। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা এদেশের জনগণের উপর শাসনের নামে কুশাসন করেছে।
৪. দুর্নীতির ব্যাপকতা: রাজনৈতিকভাবে কোম্পানির কর্মচারীদের ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে তারা এদেশে অবৈধভাবে ব্যবসা শুরু করে। ঐতিহাসিক কেরী মন্তব্য করেন যে, “দ্বৈতশাসনের ফলে বাংলায় অরাজকতা ও দুর্নীতি চরমভাবে আত্মপ্রকাশ করে।” এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করাত নবাবের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না।
৫. বাংলার জনজীবনে অরাজকতা: লর্ড ক্লাইভ কর্তৃক প্রবর্তিত দ্বৈত শাসন ছিল এদেশবাসীর জন্য এক চরম অভিশাপ। এ ব্যবস্থায় নবাব ও কোম্পানির উপর স্ব-স্ব দায়িত্ব অর্পিত হলেও প্রকৃতপক্ষে কারো কোনো ক্ষমতা ছিল না। ফলে বাংলার শাসন ব্যবস্থায় এক চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয় এবং জনগণের দুঃখ দুর্দশা চরমে পৌঁছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসন ছিল বাংলার জনসাধারণের জন্য চরম অভিশাপসরূপ। এ শাসনের ফলে নবাব পান ক্ষমতাহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি পায় দায়িত্বহীন ক্ষমতা। দ্বৈত শাসন সম্পর্কে মহাজন বলেন, “দ্বৈত শাসনব্যবস্থা ছিল সাময়িক, ১৭৬৫ সালে ইংরেজগণ যে সমস্যার সম্মুখীন হয় তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটি ছিল একটি তাৎক্ষণিক চুক্তি।