অথবা, কোম্পানি শাসনামলে ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রাদেশিক শাসন কাঠামো সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, কোম্পানি শাসনামলে ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রাদেশিক শাসন কাঠামো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ওয়ারেন হেস্টিংস অতি সংকটময় মুহূর্তে বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন। এ সম্বন্ধে বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্যার আলফ্রেড লয়াল বলেন, “ভারতে ইংরেজদের ভাগ্য সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গিয়েছিল। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে বাংলার বহুলোক মারা যায়; বহু গ্রাম ও উর্বর ভূমি অরণ্যে পরিণত হয়। দেশের পরিস্থিতি যখন এরূপ জটিল, তখনই তিনি এদেশের দায়িত্বভার লাভ করেন।
ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রাদেশিক কাঠামো: কোম্পানি শাসনামলে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রাদেশিক শাসন কাঠামো ছিল নিম্নরূপ:
১. প্রাদেশিক কাউন্সিল গঠন: ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৩ সালে জেলা প্রথা প্রত্যাহার করে জেলার পরিবর্তে দেশকে পাঁচটি প্রদেশে বিভক্ত করেন। এ প্রদেশগুলো হলো যথাক্রমে- (ক) কলকাতা, (খ) মুর্শিদাবাদ, (গ) দিনাজপুর, (ঘ) ঢাকা ও (ঙ) বর্ধমান।
২. প্রাদেশিক কাউন্সিলের পরিষদ গঠন: গভর্নর ও একজন চীফ কাউন্সিলরসহ পাঁচজন কাউন্সিলর নিয়ে প্রাদেশিক পরিষদ গঠন করা হয়। প্রত্যেক প্রাদেশিক কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে থাকবে তিন বা ততোধিক জেলা।
৩. প্রাদেশিক কাউন্সিলের কার্যাবলি: ওয়ারেন হেস্টিংস তার সমস্ত প্রদেশগুলোকে ২৮টি জেলায় বিভক্ত করেন। প্রতিটি জেলায় একজন করে দেশি অফিসার নিয়োগ করা হয়। তার উপাধি ছিল দেওয়ান’।
৪. প্রাদেশিক কাউন্সিলের সহযোগী সংগঠন: ১৭৭৩ সালের অপারেশনে বলা হয় যে, প্রাদেশিক কাউন্সিলকে তিনটি সংগঠন সাহায্য করবে। যেমন-
(ক) প্রতিটি জেলায় কালেক্টরের বদলে দেশীয় দেওয়ান নিয়োগ করা হবে।
(খ) মফস্বলের রাজস্ব সংগ্রহের জন্য নিযুক্ত করা হবে আমিন।
(গ) বোড অব রেভিনিউ বিলুপ্ত করে তদস্থলে নিয়োগপ্রাপ্ত কমিটি অব রেভিনিউ। এর সদস্য সংখ্যা ছিল পাঁচজন।
৫. প্রাদেশিক কাউন্সিলের সীমাবদ্ধতা: পূর্বে বলা হয়েছিল যে, প্রাদেশিক কাউন্সিলের সাথে গভর্নরের যোগাযোগ থাকবে। এমনটি তারা তাদের কার্যের জন্য গভর্নরের নিকট দায়বদ্ধ থাকবেন। এভাবে কেন্দ্রীকরণ দেখা দেয়।
৬. প্রাদেশিক কাউন্সিলের পদ বিলুপ্তকরণ: ওয়ারেন হেস্টিংস তার শাসনকার্য পরিচালনার জন্য প্রাদেশিক কাউন্সিলের পদ বিলুপ্ত করে রাজস্বের সমস্ত দায়িত্ব কমিটি অব রেভিনিউ গভর্নরের উপর ন্যস্ত করেন। চারজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী নিয়ে গঠিত ও জেনারেল-ইন-কাউন্সিল কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এ কমিটিকে রাজস্ব শাসনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ওয়ারেন হেস্টিংস পূর্ববর্তী শাসন ব্যবস্থার যে নীতি তার সংস্কার করেন। শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনে তিনি মৌলিকত্বের প্রমাণ দেন। প্রজা কল্যাণ উপযোগী এক শাসনব্যবস্থা তিনি ভারতে উপহার দেন। বিচার এ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট নতুনত্ব আনয়ন করেন। তার প্রাদেশিক কাউন্সিল ছিল একটি অস্থায়ী ও সাময়িক প্রতিষ্ঠান। সহসা মফস্বল থেকে কালেক্টর প্রথা প্রত্যাহার করা হলে শূন্যতা ও অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে এ ভয়ে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ন কয়েকটি জেলা সমন্বিত করে একেকটি প্রাদেশিক কাউন্সিলের । তত্ত্ববধানে ন্যস্ত করা হয়েছিল।