অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংসের দেওয়ানি
ফৌজদারি বিচার সংস্কার বলতে কী বুঝ?
অথবা, ওয়ারেন হেস্টিংসের দেওয়ানি ফৌজদারি বিচার সংস্কার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন ১৭৭২ সালে। এই সময় তিনি বিচার বিভাগকে রাজস্ব, শাসন থেকে আদালা করার ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে ১৭৮১ সালে কিছু আইন প্রয়োগ করা হয়। এর তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল- প্রথমবারের মতো সুনির্দিষ্ট আইন-কানুন প্রণয়ন, হিন্দু-মুসলমান আইনগুলোর সুনির্দিষ্টকরণ এবং বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার ইচ্ছো।
ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার সংক্রান্ত সংস্কার : ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার সংক্রান্ত সংস্কার প্রধানত দেওয়ানি ও ফৌজদারি এ দু’ভাগে বিভক্ত ছিল। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. মফস্বল দেওয়ানি আদালত: জমিদারি ও তালুকদারির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলা মোকাবিলা ভিন্ন অপরাপর যাবতীয় দেওয়ানি অর্থাৎ ভূমি সংক্রান্ত মামলার বিচারের ভার এ আদালতের উপর ন্যস্ত করা হয়। এ পর্যায়ে সারাদেশে বেশ কিছু জেলায় বিভক্ত করে সেগুলোকে জেলা কালেক্টর নিয়োগ করা হয়। এ কালেক্টরের কাছেই দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের ভার দেওয়া হয়। জমিদারি বা তালুকদারির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলার বিচার ক্ষমতা ছিল সদর দেওয়ানি আদালতের হাতে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী মুঘল রীতি অনুসরণ করা হয়। ১৭৭৫ সালে সদর দেওয়ানি আদালত বিলুপ্ত করে প্রাদেশিক দেওয়ানি আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু ১৭৮০ সালে পুনরায় সদর দেওয়ানি আদালত প্রবর্তিত হয়।
২. ফৌজদারি আদালত : এ বিচারালয় যাবতীয় ফৌজদারি মামলার বিচার করার অধিকার প্রাপ্ত ছিল। কেবলমাত্র যে সকল মামলায় আসামীকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হতো, এসব মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য সদর নিজামত আদালতে প্রেরণ করা হতো। নবাব ছিলেন এ আদালতের সেনাপতি। মুর্শিদাবাদ থেকে ফৌজদারি আদালত কলকাতায় আনা হয়। ১৭৭২ সালের পরিকল্পনায় ফৌজদারি আদালতের সমস্ত অফিসারকে সরকারি বেতনভোগী কর্মচারীতে পরিণত করা হয়। ফৌজদারি আদালতে কাজী ও মুফতি দু’জন মৌলভীর সাহায্যে আইনের ব্যাখ্যা করা হয়। কিন্তু হেস্টিংসের এসকল কর্মকাণ্ড আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে ফৌজদারি আদালত আবার দেশি এজেন্সির হাতে ন্যস্ত হয়। এ ব্যবস্থায় ফৌজদারি আদালতের সাথে একটি করে কারাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৮১ সালে পুনরায় ফৌজদারি আদালতের সংস্কার করা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক প্রবর্তিত বিচার ব্যবস্থা ছিল অন্যতম পদক্ষেপ। তিনি বিচার ব্যবস্থাকে সঠিক রূপ দিতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। তার সংস্কার পদক্ষেপের মধ্যে প্রত্যেক জেলায় দেওয়ানি মামলার বিচারের জন্য একটি করে দেওয়ানি আদালত এবং ফৌজদারি মামলা বিচারের জন্য একটি করে ফৌজদারি আদালত গঠন উল্লেখযোগ্য ছিল।