অযোধ্যার বেগমদের সাথে হেস্টিংসের সম্পর্ক সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, অযোধ্যার বেগমদের সাথে হেস্টিংসের সম্পর্ক কী ছিল?

অথবা, অযোধ্যার বেগমদের সাথে হেস্টিংসের সম্পর্ক সম্বন্ধে সংক্ষেপে বিবরণ দাও।

উত্তর: ভূমিকা কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামের গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিং ও অযোধ্যার বেগমদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিল চরম অর্থলোলুপ ও নীতিজ্ঞান বিবর্জিত কর্মকাণ্ডের দ্বারা প্রভাবিত।
ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে দুর্ভিক্ষাবস্থা মোকাবিলায় ও মারাঠা-ফরাসি শক্তির সাথে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য হেস্টিংসের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি চাঁদাবাজির আশ্রয় নেন। যার শিকার হয়েছিল অযোধ্যার বেগমরা।

অযোধ্যার বেগমদের সাথে সম্পর্ক: অযোধ্যার বেগমদের সাথে ওয়ারেন হেস্টিংসের সম্পর্ক বা আচরণ ছিল নিম্নরূপ:

১. বেগমদের পরিচয়: তৎকালীন অযোধ্যার নবাব আসফ- উদ-দৌলার মাতা ও দাদি ইতিহাসে বেগম নামে পরিচিত। অন্য কথায় প্রয়াত নবাব সুজা-উদ-দৌলার স্ত্রী ও মাতা অযোধ্যার বেগম নামে পরিচিত ছিলেন।

২. অযোধ্যার নবাবের নিকট চাঁদা দাবি: বারানসির রাজা চৈত সিংহের উপর অত্যাচার করেও যথন তিনি অর্থ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন, তখন তিনি অযোধ্যার নবাব আসফ-উদ-দৌলাকে অর্থ দিতে অনুরোধ করেন। নবাব কোম্পানির প্রাপ্য অর্থ মেটাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হন। ওয়ারেন হেস্টিংসের অনুরোধ – রক্ষা করতে গিয়ে তিনি স্বীয় মাতা ও পিতামহীর সঞ্চিত অর্থের দিকে হাত বাড়ান।

৩. বেগমদের নিকট চাঁদা দাবি : অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলার মৃত্যুর পর উভয় বেগম তাদের নিজেদের ব্যয় সংকুলানের জন্য প্রথা অনুযায়ী জায়গীর ভোগ করছিলেন। এছাড়া বেগমদের নিজস্ব কিছু মণিমুক্তা এবং সঞ্চিত অর্থ ছিল। আসফ-উদ-দৌলা বেগমদের এসব অর্থ হেস্টিংসকে প্রদানের জন্য হেস্টিংসের সাহায্য কামনা করেন। এমতাবস্থায় বেগমদ্বয় বিরক্ত হয়ে ত্রিশ লক্ষ টাকা প্রদান করে কোম্পানির নিকট থেকে এ প্রতিশ্রুতি আদায় করেন যে, ভবিষ্যতে আসফ-উদ-দৌলা ২ অথবা হেস্টিংস তাদেরকে অর্থের জন্য বিরক্ত করবে না।

৪. বেগমদের দেওয়ান ও খোজাদের উপর নির্যাতন: ১৭৮১ সালে অযোধ্যার বেগমরা চৈত সিংহের বিদ্রোহাত্মক আচরণ সমর্থন করেছিলেন এ অজুহাতে ত্রিশ লক্ষ টাকা পাওয়ার পরও কোম্পানি বেগমদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয়। বেগমদের কাছ থেকে আরো অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে ব্রিস্টো বেগমদের দেওয়ান ও খোজাদের বন্দী করে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন।

৫. সৈন্য প্রেরণ: অর্থ আদায়ের কৌশল হিসেবে ওয়ারেন হেস্টিংস বেগমদের দেওয়ান ও খোজাদের বন্দী ও নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হননি। বরং
আসফ-উদ-দৌলার আপত্তি সত্ত্বেও একদল ব্রিটিশ সৈন্য অযোধ্যায় প্রেরণ করে বেগমদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের যাবতীয় ধনরত্ন বলপূর্বক কেড়ে নেন। অর্থের জন্য নিরীহ বৃদ্ধা বেগমদের উপর অত্যাচার করতে হেস্টিংস এতটুকু দ্বিধাবোধ করেননি।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, অযোধ্যায় বেগমদের সাথে হেস্টিংস সম্পর্ক ছিল চরম বৈরিতাপূর্ণ। হেস্টিংস অযোধ্যার বেগমদের প্রতি যে আচরণ করেন তা ছিল বর্বরতারই নামান্তর। নিছক অর্থের জন্য তার নারী নির্যাতন ব্রিটিশ ভারতের জন্য একাই কালো অধ্যায়ের সূচনা করে। তার এ কর্মকাণ্ডের দ্বারাই প্রমাণিত হয় ইংরেজরা অর্থের জন্য কতটা হীনমন্যতার পরিচয় দিতে পারে।