চৈত সিংহ ও ওয়ারেন হেস্টিংসের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, চৈত সিংহ ও ওয়ারেন হেস্টিংসের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে কী জান?

অথবা, চৈত সিংহ ও ওয়ারেন হেস্টিংসের
সংঘর্ষ সম্পর্কে লিখ।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি যেসব শাসকের কৃতকর্মে দৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপিত হয় গভর্নর হেস্টিংস ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে পূর্বতন গভর্নরগণের সময়ে কোম্পানি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিপর্যস্ত হলে তিনি কৃতিত্বের সাথে তা মোকাবিলা করেন। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি দৃঢ়করণে তাকে এমন কতকগুলো পদক্ষেপ নিতে হয় যা একজন সুশাসকের পক্ষে দৃষ্টিকটু। এসব ঘটনাগুলোর মধ্যে বারানসির রাজা চৈত সিংহের প্রতি তার গৃহীত নীতি বা পদক্ষেপ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।

চৈত সিংহের সাথে হেস্টিংসের সম্পর্ক: বারানসির রাজা চৈত সিংহের সাথে কলকাতার ইংরেজ গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংসের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক ছিল নিম্নরূপ:

১. দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের সূচনা: ১৭৭৫ সালে অযোধ্যার নবাবের সাথে কোম্পানির চুক্তির শর্তানুসারে বারানসি কোম্পানির করদরাজ্যে পরিণত হয়। এ চুক্তিতে উল্লেখ ছিল যে, বারানসির রাজা চৈত সিংহের উপর কোম্পানির কেবলমাত্র বাৎসরিক কর ভিন্ন অন্য কোনো দাবি থাকবে না। অর্থসংকটের পথ থেকে উত্তরণের জন্য হেস্টিংস চৈত সিংহের উপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের সূচনা করেন।

২. পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি: অর্থ সংকট মোকাবিলার জন্য হেস্টিংস বারানসির রাজা চৈত সিংহের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। প্রথমে রাজা চৈত সিংহ আপত্তি জানালেও শেষ পর্যন্ত একবারের জন্য অর্থ সাহায্য দিতে রাজি হন।

৩. চাঁদা ও জরিমানা আদায়: ১৭৭৯ সালে হেস্টিংস পুনরায় রাজা চৈত সিংহের নিকট চাঁদা দাবি করেন। রাজা চাঁদা প্রদানে অক্ষমতা জানালে হেস্টিংস তার রাজ্যে সৈন্য প্রেরণ করে মোট দাবির অতিরিক্ত ২০০০ পাউন্ড জরিমানা আদায় করেন।

৪. চৈত সিংহের জমিদারি বিলুপ্ত: বারানসি অধিকার এবং চৈত সিংহকে গ্রেফতারের নির্দেশের পাশাপাশি তার জমিদারিও কেড়ে নেন। উপযুক্ত বাৎসরিক ভাতার বিনিময়ে চৈত সিংহ তার বারানসির জমিদারি ত্যাগ করেন।

৫. চৈত সিংহের প্রজাদের বিদ্রোহ: রাজাকে অপমান অপদস্ত হতে দেখে একদল সশস্ত্র প্রজা রামনগর হতে হেস্টিংসের সেনাদলকে আক্রমণ করে। হেস্টিংস প্রাণভয়ে চুনাতে পলায়ন করেন। এ সুযোগে রাজা চৈত সিংহ ইংরেজদের রোষানল থেকে পালিয়ে লতিফগড়ে আশ্রয় নেন।

৬. পতিতার যুদ্ধ : অতঃপর চৈত সিংহ ও হেস্টিংসের বাহিনীর মধ্যে পতিতা নামক স্থানে এক যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ যুদ্ধে চৈত সিংহের বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।

৭. চৈত সিংহকে বন্দী: যথাসময়ে রাজা চৈত সিংহ তার কৈফিয়ত প্রদান করেন। কিন্তু রাজা চৈত সিংহ তার প্রদত্ত কৈফিয়ত হেস্টিংসের মনঃপূত হয়নি। জরিমানা আদায়ের জন্য হেস্টিংস সসৈন্যে বারানসি উপস্থিত হয়ে চৈত সিংহকে তার প্রাসাদেই বন্দী করেন। এতে চৈত সিংহের প্রজাগণ বিদ্রোহী হয়ে তিনজন অফিসারসহ অনেক ইংরেজ সৈন্যকে হত্যা করে। পরে সৈন্য সংগ্রহ করে হেস্টিংস বারানসির জমিদারি ত্যাগ করেন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বারানসির রাজা চৈত সিংহ কোম্পানির অধীনস্ত জমিদার হলেও তার ব্যক্তিগত অধিকার ছিল। ১৭৭৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী তিনি নির্ধারিত বার্ষিক কর ভিন্ন অতিরিক্ত যেকোনো কর প্রদানে বাধ্য ছিলেন না। তাই হেস্টিংসের বারবার অতিরিক্ত কর দাবি ও আদায় ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিক। হেস্টিংসের এরকম আচরণ নিছক বর্বরতা ছাড়া কিছু নয়।