কর্নওয়ালিশ কোডের গুণাবলি সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, কর্নওয়ালিশ কোডের ইতিবাচক প্রভাব লিখ।

অথবা, কর্ণওয়ালিশ কোডের ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা: রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন দেশীয় শাসন পদ্ধতি সংরক্ষণ করে দেশীয়দের হাতে শাসনভার ন্যস্ত করে এবং এর উপর থেকে শাসন করার পক্ষপাতী। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ ৪৮টি রেগুলেশন বা আইন জারি করেন। উক্ত রেগুলেশনগুলি সাধারণভাবে কর্নওয়ালিশ কোড নামে খ্যাত। রোমান সম্রাট জাস্টিয়ান বা ফরাসি বীর নেপোলিয়ানের মত একটি মহান ঐতিহাসিক কোড প্রতিষ্ঠার গৌরব অর্জনের চেষ্টা করেন কর্ণওয়ালিশ।

কর্নওয়ালিশের কোডের গুণাবলি :
কর্নওয়ালিশের কোডের গুণাবলি ইতিবাচক প্রভাব বা গুণাবলি ছিল নিম্নরূপ:

১. সমাজ কাঠামোতে সচলতা বৃদ্ধি: আইন ও সমাজ একে অপরকে প্রভাবিত করে। আইন সমাজ বদলায়, আবার সমাজও আইন বদলায়। আইনের বিকাশ যখন সামাজিক বিকাশ থেকে আপনাআপনি উত্থিত হয়, তখন সামাজিক পরিবর্তন ঘটে ধীরে ধীরে অলক্ষ্যে, অনায়াসে ও অঘোষিতভাবে। জমিদারি রক্ষার জন্য এখন প্রয়োজন উদ্যম, কর্মচঞ্চল ও রাজস্ব আদায়ে পটু ব্যবসায়ী, অলস আভিজাত্য নয়। সমাজ কাঠামোতে এ সচলতা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের সৃষ্টি করে।

২. পত্তনি প্রথার উদ্ভব: নিলামের খড়গ থেকে রেহাই পাবার জন্য বর্ধমানের মহারাজা সর্বপ্রথম পত্তনি প্রথার প্রবর্তন করেন। বাঙালি সমাজ বিবর্তনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জমিদারি রক্ষার জন্য প্রচলিত আইনকে উপেক্ষা করে বর্ধমানের মহারাজা তার জমিদারি অসংখ্য তালুকে বিভক্ত করে চিরস্থায়ীভাবে নগদ সেলামির বিনিময়ে কায়েমি খাজনা ইজারা দেন। তদুপরি একসঙ্গে প্রাপ্ত সেলামির অর্থ বিনিয়োগ করে অতিরিক্ত লাভের ব্যবস্থা করা যায়। ১৮১৯ সালে সরকার পত্তনি প্রথা বৈধ বলে স্বীকার করে নেয়।

৩. শহরের বিকাশ: পূর্বে শহর বলতে ছিল ঢাকা, মুর্শিদাবাদও কলকাতা। এছাড়া সবই ছিল গ্রাম। নতুন জেলা সৃষ্টি ও জেলা সদরে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট, কালেক্টর ও তাদের আমলাদের অবস্থানের ফলে জেলা সদর ধীরে ধীরে শহরে রূপান্তরিত হয়। আদালত সৃষ্টি করে উকিল, মোক্তার, মোহরাব টাউট ও মামলাবাজ। তাদের আবাসিক প্রয়োজনে নির্মিত হয় বাড়িঘর। এমনিভাবে নাগরিক জটিলতা। কালক্রমে জেলা সদর রূপান্তরিত হয় শহরে।

৪. শাসনতান্ত্রিক ঐক্য স্থাপন: হিন্দু ও মুসলিম মূল আইনের অধীনেই কর্নওয়ালিশের আদালত পরিচালিত হতো। তার কোডের প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক দিক হচ্ছে জেলা, জমিদার, নিরপেক্ষ আদালত, পুলিশ, উকিল ইত্যাদি। কর্নওয়ালিশ এসব প্রতিষ্ঠান পূর্নবিন্যস্ত ও পূর্নগঠিত করে শাসনতান্ত্রিক ঐক্য স্থাপন করার চেষ্টা করেন।

৫. পশ্চিমা সভ্যতার উদ্ভব: কর্নওয়ালিশের কোড বাঙালির
সমাজদেহে পশ্চিমা সভ্যতা, নৈতিকতা ও মনোভাব প্রভৃতির অনুপ্রবেশে সাহায্য করে। শহুরে সমাজের কিছু মানুষ পাশ্চাত্য নিয়ম-নীতির চর্চায় নিজেদের নিয়োজিত করলে এখানে আধুনিক সমাজের বিবর্তন ঘটে। কোড বাঙালি জাতির পুরাতন স্বভাব-চরিত্র পুরোপুরি বদলিয়ে দিতে না পারলেও তা অনেক নতুন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করছে, সন্দেহ নেই।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক বাংলার সামাজিক বিবর্তনে কর্নওয়ালিশের কোড বিভিন্নক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জমিদারি রক্ষায় প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সৃষ্টি, মধ্যস্বত্বভোগীর উদ্ভব, নগরায়ণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে কোডের প্রভাব অপরিসীম।