অথবা, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সামাজিক কারণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সামাজিক কারণ সম্বন্ধে সংক্ষেপে বিবরণ দাও।
ভূমিকা: ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ পলাশীর যুদ্ধের পরবর্তী একশত বছরে ব্রিটিশ শোষণ কুশাসনেরই চরম পরিণতি। বাস্তবিক পক্ষে এটি ছিল ভারতীয়দের প্রথম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এ সংগ্রামের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কারণের ন্যায় কতিপয় সামাজিক কারণও বিদ্যমান ছিল।
১. ভারতবাসীর প্রতি ইংরেজদের দুর্ব্যবহার: ভারতীয় দায়ী ছিল। ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকেই পভারতবাদের জন্যে জনসাধারণের সামাজিক অসন্তুষ্টি ১৮৫৭ সালের শাসক বর্গের ঘৃণার মনোভাব এদেশবাসীর মনে গভীর বেদনা ও হতাশার সৃষ্টি করেছিল। খ্রিস্টান ধর্মযাজকগণ প্রকাশ্যে হিন্দুদের মূর্তিপূজা ও সামাজিক সংস্কারাদির তীব্র নিন্দা করত।
২. সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি: সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষের জনসাধারণকে জিম্মি করার প্রয়াস পায়। ইংরেজ সৈন্য ও ভারতীয় সিপাহীদের মধ্যে পদবি, বেতন ও ভাতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারতম্য ছিল এবং ভারতীয় সিপাহীদের পদোন্নতির সুযোগও ছিল খুব কম।
৩. জনগণের প্রতি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার: খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের খ্রিস্টধর্মপ্রচার, ধর্মান্তরিত ভারতীয়দের জন্যে পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগের অধিকার প্রদান, ভারতীয় নর-নারীদের প্রতি ব্রিটিশ শাসকদের অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন ভারতবাসীকে ব্রিটিশ বিদ্বেষী করে তোলে। এরূপ পরিস্থিতিতে ভারতীয় সিপাহী ও জনসাধারণকে ধূপায়িত করে সিপাহী বিদ্রোহকে ত্বরান্বিত করে।
৪. ব্রিটিশ সৈন্যদের সামাজিক অনাচার: ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারতীয় সৈন্যদের সাথে দুব্যবহার করতো। তারা অহরহ ভারতীয় নারীদের ধর্ষণ করতো। ফলে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
৫. ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ: ইসলামি বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়াকফকৃত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি বাজেয়াপ্ত করলে মুসলমানগণ বিদ্রোহী হয়ে উঠে।
৬. সংস্কারমূলক কাজে সন্দেহ পোষণ: কোম্পানির সমাজ সংস্কার এবং জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম এদেশের গোঁড়া পন্থি হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। দেশবাসীর ধর্মচ্যুতির ভয় সম্মিলিত হিন্দু-মুসলমানদের ধূমায়িত অসন্তোষে বিক্ষোভের রূপ পরিগ্রহ করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহে সামাজিক কারণ অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ব্রিটিশ সরকারের কঠোর দমন নীতির ফলে এ বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়ে যায়। মূলত ভারতবাসীর সামাজিক মর্যাদা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদান ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের মূলে বহুলাংশে ক্রিয়া করেছিল।