অথবা, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ইংরেজ ঐতিহাসিকদের মতামত সম্পর্কে ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে ১৮৫৭সালের মহাবিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রথম ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের নামকরণ সম্পর্কে ঐতিহাসিক মহলে মতভেদ রয়েছে। এই বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ইংরেজ ঐতিহাসিকদের মধ্যে পরস্পর বিরোধী মতভেদ লক্ষ করা যায়।
ইংরেজ ঐতিহাসিকদের মতভেদ: ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ইংরেজ ঐতিহাসিকদের মধ্যে পরস্পর বিরোধী মতামত লক্ষ করা যায়। ঐতিহাসিকদের একদল, যেমন- এর্টন, আলেকজান্ডার ডাফ, ফরেস্টর প্রমুখের মতে, এই বিদ্রোহ সিপাহীগণ কর্তৃক শুরু হলেও কালক্রমে তা জাতীয় আন্দোলনে পরিণতি লাভ করে।
ভিনসেন্ট সিমথ এর মতে, তিনি স্বীকার করেন যে, সিপাহীদের বিদ্রোহের পূর্বেই অনেক অঞ্চলের বেসামরিক জনগণের মধ্যে অসেন্তোষ ও বিক্ষোভ যথেষ্ট বিস্তার লাভ করে এবং সিপাহীদের বিদ্রোহের পূর্বেই তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠে।
G.E. Harvey এর মতে, তিনি মন্তব্য করেন যে, বিদ্রোহ প্রথমদিকে নিছক মুসলিম বিদ্রোহ বা হিন্দু বিদ্রোহ ছিল না। এই বিদ্রোহ ছিল হিন্দু ও মুসলিম নির্বিশেষে সকলের মিশ্রিত অসন্তোষের প্রকাশ মাত্র।
চার্লস রেবার জনকে, রবার্টস এর মতে, এই বিদ্রোহ সিপাহী বিদ্রোহ ভিন্ন অন্য কিছুই ছিল না। এখানেও দেখা যাচ্ছে যে কতিপয় ইংরেজ ঐতিহাসিক ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করলেও প্রখ্যাত ঐতিহাসিকরা এই বিদ্রোহকে শুধুমাত্র সিপাহীদের বিদ্রোহ হিসেবে অভিহিত করেননি। তাদের মতে, এই বিদ্রোহ ছিল জনগণের ন্যায়সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠার বিদ্রোহী যার সাথে সিপাহীরাও সম্পৃক্ত ছিল।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় ঘটনা। এই বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ দৃষ্ট হয়। কতিপয় ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও লেখকদের মতে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ছিল বিস সিপাহীদের বিদ্রোহ।