অথবা, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রতি বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে যা জান ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রতি বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে বিবরণ দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় ঘটনা। এই মহাবিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক ভারতীয়দের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও অসন্তোযের বহিঃপ্রকাশ। ঐতিহাসিকদের মতে, এটা ছিল ভারতীয়দের প্রথম জাতীয় সংগ্রাম বা স্বাধীনতা সংগ্রাম।
বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতিক্রিয়া: ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে বুদ্ধিজীবীদের অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ভারতীয় জনসাধারণের জাতীয় জীবনের একটি স্বর্ণ্যলোচিত অধ্যায়। এই প্রথমবারের মতো ভারতবাসী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। সিপাহীদের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম এই আন্দোলনের সূচনা ঘটলেও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল ভিন্ন।
২. শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব: ব্রিটিশদের প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা ব্রিটিশদের প্রবর্তিত ইংরেজি শিক্ষায় নিজেদেরকে উদ্ভাসিত করে তোলে।
৩. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার ফলে বিশেষ করে বাঙালি মুসলমান বুদ্ধিজীবীদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। কেননা এই বিদ্রোহের পরিণাম তাদের জন্য বিশেষ ভয়াবহ হয়েছিল।
৪. বুদ্ধিজীবীদের মনোভাব : তারা উপলব্ধি করতে শিখে যে, সরকারের সাথে অসহযোগিতা ও বিদ্রোহের মনোভাব তাদের স্বার্থের পক্ষে মারাত্মক আত্মঘাতী। জাতীয় জীবনের এই সন্ধিক্ষণে সরকারের সাথে সহযোগিতা এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা যে তাদের জন্য অপরিহার্য একথা বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহল মর্মে মর্মে অনুভব করেছিল।
৫. নিরপেক্ষ ভূমিকা: তারা বিদ্রোহের সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলেও ব্রিটিশদেরকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল। তবে বিদ্রোহের পর বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহল সামাগ্রিকভাবে বাঙালিদের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের মানোন্নয়ন ঘটানোর জন্য ব্রিটিশ সরকারের সাথে সহযোগিতার নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে।
৬. সাফল্যের দিক-নির্দেশনা: মহাবিদ্রোহকে তারা ভবিষ্যৎ সাফল্যের দিক নির্দেশনা হিসেবে চিহ্নিত করে রাজনৈতিক ভাবে ক্রমান্বয়ে সচেতন হয়ে উঠে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহল তাদের অগ্রগতির অন্তরায় হিসেবেই চিহ্নিত হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, এই বিদ্রোহের প্রতি বাঙালি জনসাধারণের সমর্থন থাকলেও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল না। বিশেষ করে সিপাহীরাই এর অগ্রভাগে ছিল। এই ব্যর্থতা থেকে বুদ্ধিজীবী মহল মহাবিদ্রোহকে তাদের সামাগ্রিক অগ্রগতির অন্তরায় হিসেবে মনে করে ব্রিটিশ সরকারের সাথে সর্বপ্রকার সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করে।