অথবা, ১৮৫৭বিদ্রোহের গুরুত্ব সালের আলোকে ব্যাখ্যা দাও।
অথবা, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের গুরুত্ব সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দাও।
ভূমিকা: সিপাহী বিদ্রোহ আধুনিক ভারতের ইতিহাসে অন্যতম যুগান্তকারী ঘটনা। এর তাৎপর্য শাসক ইংরেজ এবং শাসিত ভারতীয় উভয়ের নিকট সুদূরপ্রসারী ছিল। স্যার লেপেল প্রিফিন ভারতের ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে এক সৌভাগ্যজনক ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন। এ বিদ্রোহ সংঘটিত না হলে কোম্পানির শাসনের গুরুতর দোষত্রুটি ও অনিয়মের প্রতি কখনও লন্ডন কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকৃষ্ট হতো না।
ঐতিহাসিকদের মতামত: গ্রিফিন বলেন, এ বিদ্রোহ ভারতীয় আদর্শকে অনেক মেঘ হতে মুক্ত করে। এর ফলেই এক অলস, অত্যাচারে লালিত সেনাবাহিনী ভেঙে দেয়া হয়। এর ফলেই এক অপ্রগতিশীল স্বার্থপর ও বাণিজ্যভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থার স্থলে এক উদার ও বিজ্ঞ প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এইচ. জি. রলিনসন বলেন, “যে বিদ্রোহ এত দুঃখকষ্ট, জীবনহানি ও তিক্ত অনুভূতির কারণ হয়েছিল তাকে সৌভাগ্যজনক বলা কঠিন, কিন্তু তা অবশ্যই বায়ুমন্ডলকে অনেক মেঘ হতে মুক্ত করেছিল।
কে. এ পন্নিকর ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের গুরুত্বের তিনটি দিক উল্লেখ করেন:
প্রথমত, এ বিদ্রোহ ছিল দেশের পুরাতন জায়গার ও রাজন্যদের জাতীয় স্বাধীনতা এবং তাদের হৃত্ত মর্যাদা পুনরুদ্ধার করার সর্বশেষ প্রচেষ্টা… এবং সেহেতু এটি তাদের জন্য প্রকৃতপক্ষেই এক সাহসী পদক্ষেপ ছিল।
দ্বিতীয়ত, ১৮৫৭ সালের মহান বিদ্রোহ দু’টি যুগের মধ্যে পুরান ও নতুন যুগের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে। কারণ, ভারতে বিদ্রোহের পর প্রতিষ্ঠিত সরকারি যন্ত্র, এর নীতি, রীতি ও ধ্যানধারণা ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির নীতি, রীতি ও ধ্যানধারণা হতে মূলতঃ পৃথক।
তৃতীয়ত, ব্রিটিশ সরকারের শ্বেতাঙ্গ সৈন্যবাহিনী তার ভারতীয় জনগণের উপর যে নিষ্ঠুরতা ও নির্যাতন চালায়, তা এক চুক্ষশূল হয়ে থাকে। আর এভাবেই তা পরবর্তী সর্বসময়ব্যাপী এ দুই জাতির মধ্যে জাতীয় ও বর্ণগত বৈষম্য সৃষ্টি করে চলে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ প্রকৃতপক্ষে কেবল সিপাহী অভ্যুত্থানই ছিল না; বরং এটি ছিল বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ। ভারতে বিদেশি শাসনের অবসান ঘটাই ছিল এ অভ্যুত্থানের সুস্পষ্ট লক্ষ্য। এ বিদ্রোহ সিপাহীদের দ্বারা সূচিত হলেও এটি কেবল তাদের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; জনসমষ্টির একটি বড় অংশ হতে কোনো না কোনোভাবে অংশগ্রহণ করে বা এর প্রতি সমর্থন জানায়।