অথবা, ইবনে রুশদ জ্ঞানতত্ত্ব বলতে কী বুঝান?
অথবা, ইবনে রুশদের জ্ঞানতত্ত্ব সম্পর্কে যা জন লেখ।
অথবা, ইবনে রুশদ জ্ঞানতত্ত্বে কী বলেছেন?
অথবা, ইবনে রুশদের জ্ঞানতত্ত্ব উল্লেখ কর।
অথবা, ইবনে রুশদের জ্ঞানতত্ত্ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভূমিকা: মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে যে কয়জন মুসলিম দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে তাদের মধ্যে ইবনে রুশদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি শৈশবেই শিক্ষার প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন। এরপর তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী হন।
ইবনে রুশদের জ্ঞান তত্ত্ব: ইবনে রুশদের জ্ঞানের পরিসীমা ব্যাপক। তিনি সবসময় জ্ঞানের সাধনে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। জ্ঞানচর্চা করা ছিল তার একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তিনি এরিস্টটলের ভাষ্যকার হিসেবে জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি এরিস্টটলের অন্য ভাষ্যকার থেকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেন। তাঁর দার্শনিক চিন্তাভাবনা এমন একটা স্বকীয় ধারা সৃষ্টি করেছিলেন যা একটি বিশেষ আদর্শ হিসেবে ইউরোপসহ সারাবিশ্বে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল।
ইবনে রুশদ মুসলিম দর্শনের জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনায় সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর জ্ঞান তাঁর আত্মা সম্পর্কিত দর্শনের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত। তিনি চালক বুদ্ধির মতো উচ্চতর বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি আত্মা ও বুদ্ধিবৃত্তির মধ্যে অতি সতর্কতার সাথে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন।
ইবনে রুশদের মতে, ইতর প্রাণীর আন লাভের উপায় হলো সংবেদন ও কল্পনা। আর মানুষের জানলাভের উপায় হলো সংবেদন, কল্পনা ও বুদ্ধি। বুদ্ধির মাধ্যমে সার্বিক বা বিশেষের জ্ঞান লাভ করা সম্ভব। তাঁর মতে, মানবীয় জ্ঞান বুদ্ধিবৃত্তির দ্বারা অর্জিত হয়।
ইবনে রুশদের মতে, ‘মানুষের জ্ঞান ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে মানুষের জ্ঞান ইতর প্রাণীর জ্ঞানের চেয়ে অধিক ব্যাপক। মানুষের কথা বলা এবং যুক্তি প্রদান করার ক্ষমতা আছে। সুতরাং আল্লাহর জ্ঞান চিরন্তন এবং মানুষের অস্থায়ী।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ইবনে রুশদের নাম পাশ্চাত্য জগতে খুবই জনপ্রিয়। তাঁর জ্ঞানতত্ত্ব দর্শনে। সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং কুসংস্কার ও পঙ্গুকারী প্রভাব হতে ইউরোপকে নতুন জীবন দান করেছিল। সুতরাং মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে ইবনে রুশদের জ্ঞানতত্ত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।