খিলাফত আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কারণ সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, খিলাফত আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কারণ কি কি?

উত্তর: ভূমিকা: ভারতীয় উপমহাদেশে খিলাফত আন্দোলন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। খিলাফত আন্দোলনকে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্র এক জাগরণ বলে আখ্যায়িত করা যায়। এ আন্দালনকে কেন্দ্র করে সমগ্র ভারতবর্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বিদেশি শাসনের বন্ধন ছিন্ন করে মুসলমানদের নিজস্ব শাসন প্রতিষ্ঠা করাই ছিল খিলাফত আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

খিলাফত আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কারণ: খিলাফত আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কারণ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. তুরস্ক ও খিলাফতের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের সম্প্রীতি ও শ্রদ্ধা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলমান তুরস্কের সুলতানকে ইসলামের রক্ষক ও বিশ্ববাসীদের প্রভু হিসেবে স্বীকৃতি জানায়। এসময় ভারতবর্ষ ব্রিটিশ রাজ কর্তৃক শাসিত হতো। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তুরস্ক জার্মানির পক্ষ অবলম্বন করে এবং ব্রিটেন জার্মানির বিপক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সুযোগ বুঝে ভারতবর্ষের মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকারের উপর নিম্নোক্ত শর্ত চাপিয়ে দেয়।

(ক) যুদ্ধশেষে তুরস্ক পরাজিত হলে তুরস্ক সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা বজায় রাখতে হবে।

(খ) তুরস্কের খিলাফত ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।

(গ) তুরস্কের খলিফার প্রতি কোনোরূপ অমর্যাদার ব্যবহার করা যাবে না।

২. ব্রিটিশ সরকারের ভুয়া প্রতিশ্রুতি: তৎকালীন কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ পার্লামেন্টে এক বিবৃতি প্রদান করে বলেন যে তুরস্কের খিলাফত উচ্ছেদ কিংবা তুরস্ক সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা ধ্বংস করার কোনো ইচ্ছা ব্রিটিশ সরকারের নেই। তাঁর মতে ব্রিটিশ তুরস্কের অখণ্ডতা ধ্বংশ করার জন্য বা খিলাফত ব্যবস্থা ভেঙে দেয়ার জন্য যুদ্ধ করছে না। কিন্তু এটা ছিল কাজ উদ্ধার প্রদত্ত ভূয়া প্রতিশ্রুতি।

৩. ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ:
১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান হলে এবং জার্মানিসহ তুরস্ক পরাজিত হলে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় মুসলমানদের দেয়া পূর্ব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সক্ষম হন। যুদ্ধ শেষে জার্মানি তুরস্ক আজ শক্তির পরাজয় ঘটলে মিত্রশক্তিবর্গ এক চুক্তি সম্পাদন করে। ব্রিটেনসহ মিত্রশক্তি দ্বারা রচিত ম্যাভার্স চুক্তির শর্তানুসারে-

(ক) তুরস্ক তার অধিকৃত এলাকা হারায়।

(খ) তুরস্কের মূল ভূখণ্ড ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা হয়।

(গ) খিলাফত ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯১৯ সালের আইনের প্রতিবাদে ভারতীদের যে অসহযোগ আন্দোলন এবং খিলাফত কমিটির নেতাদের নেতৃত্বে যে অসহযোগ আন্দোলন ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা এক পর্যায়ে দুটি আন্দোলন জাতীয় ঐকমত্যে এসে কর্মসূচি নির্ধারণ করেন যা ইতিহাসে তুলনাহীন। গুরুত্ব বিচারে এ আন্দোলন ঐতিহ্যবাহী ছিল। তবে সফল না হওয়ায় কেবল হতাহত হয় মাত্র।