অথবা, ভারতীয় রাজনীতিতে মহাত্মা গান্ধীর আর্বিভাবের পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী তথা মহাত্মা গান্ধীর আর্বিভাব একটি চমকপ্রদ ও যুগান্তকারী ঘটনা। ভারতীয় রাজনীতিতে তার হাল ধরার সাথে ভারতীয় আন্দোলনেও জনসাধারণ হাজারো শক্তি ফিরে পায় এবং তা কাজে লাগায়। ফলে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কেঁপে উঠে। এজন্য অনেকে গান্ধীজির আবির্ভাব সম্পর্কে বলেছেন যে, যদি তাঁর ব্যক্তির আর্বিভাব ভারতীয় রাজনীতিতে সমকালে না হতো তাহলে হয়তো ইতিহাস অন্যভাব রচিত হতো।
ভারতীয় রাজনীতিতে মহাত্মা গান্ধীর আবির্ভাবের পটভূমি: ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর গুজরাটে করমচাঁদ গান্ধীজির জন্ম হয়। তার পিতা করমচাঁদ উত্তম চাঁদ গান্ধীজি ছিলেন একজন দিওয়ান। তিনি আইনশাস্ত্রে পড়াশুনার জন্য ইংল্যান্ডে গমন করেন। ১৮৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার নাটালে প্রবাসী ভারতীয়দের নিয়ে তিনি নাটাল ভারতীয় কংগ্রেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তবে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব বাস্তববুদ্ধি ও দূরদর্শিতার জন্য অচিরেই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয়দের অবিসংবাদি ও নেতা হিসেবে পরিণত হন।
দক্ষিণ আফ্রিকার অর্জিত অভিজ্ঞতা বিভিন্নভাবে গান্ধীজির রাজনৈতিক মতাদর্শে ও কৌশলের ভিত্তি রচনা করে এবং পরবর্তীকালে ভারতে তার কৃতিত্বে সহায়ক হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলনের ফলে গান্ধীজির আন্তর্জাতিক খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে এবং তার অসাম্প্রদায়িক ঐক্যবাদী নেতৃত্বের প্রভাব ভারতেও এসে পড়ে। গান্ধীজির অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী সত্যনিষ্ঠ ও নৈতিক সুখ্যাতি ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এ সুখ্যাতি গান্ধীজিকে ভারতে সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এনে দেয়।
১৮১৫ সালে গান্ধীজি ভারতে ফিরে আসলে তার রাজনৈতিক জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়। তাঁর রাজনৈতিক গুরু গোপাল গোখলের পরামর্শে তিনি কিছুদিন ভারত পরিক্রমায় বের হয়ে ভারতীয় সমাজ জীবন প্রণালি ও রাজনীতি সম্বন্ধে মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। গান্ধীজি তিনটি আঞ্চলিক সংগ্রামে অবর্তীন হন। এরপর গান্ধীজি সর্বভারতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। রাওলাট আইন গান্ধীজির রাজনৈতিক গঠনে আমূল পরিবর্তন এনেছিল। এত দিন তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অনুগত একজন নাগরিক। কিন্তু রাওলাট আইন তাকে বিদ্রোহী করে তুলল। এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেকে তিনি শয়তানের প্রতিভূ বলে আখ্যায়িত করলেন।
১৯১৯ সালের ১৩ মার্চ ধর্মঘট পালিত হলে গান্ধীজির ব্যক্তিগত পরিচালনায় মুম্বাইয়ে সমগ্র আন্দোলনের সূত্রপাত হলো। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়তে গিয়ে গান্ধীজি সর্বভারতীয় নেতারূপে প্রতিষ্ঠিত হলেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, গান্ধীজী ছিলেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভারতবাসীয় অবিসংবাদিত নেতা। অদ্যাবধি ভারতের অপর কোনো নেতা তার মতো এত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেন নি। ১৯১৯ সালে থেকে মৃত্যুর পূর্বে পর্যন্ত তিনি জাতির প্রধান নিয়ামক শক্তি। তার নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় আন্দোলন এক সর্বাত্মক গণসংগ্রামে পরিণত হলো এবং সমগ্র দেশ আত্মত্যাগ ও আত্মবিশ্বাসের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।