খিলাফত আন্দোলনে মওলানা মোহাম্মদ আলীর ভূমিকা মূল্যায়ন কর।

অথবা, খিলাফত আন্দোলনে মওলানা মোহাম্মদ আলীর পটভূমি মূল্যায়ন কর।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতবর্ষের মুসলমানরা শুরু থেকেই ব্রিটিশ শাসনকে গ্রহণ করতে পারেনি। তাই মুসলমানরা যখনই – সুযোগ পেয়েছে তখনই ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তুরস্ক ব্রিটেনের বিপক্ষে অবস্থান করে এবং যুদ্ধে তুরস্কের পরাজয় ঘটলে খিলাফতের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ সময় খিলাফত আন্দোলনকে গতিশীল ও পরিচালিত করতে যে কয়জন নেতা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তাদের মধ্যে মওলানা মোহাম্মদ আলীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

খিলাফত আন্দোলনে মওলানা মোহাম্মদ আলীর ভূমিকা: খিলাফত অস্তিত্ব রক্ষার্থে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্যকে টিকিয়ে রাখতে এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে জাগিয়ে তুলতে। যে খিলাফত আন্দোলন সংঘটিত হয় তার নেতৃত্বে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন মওলানা মোহাম্মদ আলী। তাঁর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন সম্প্রসারিত হয় এবং বিরাট শক্তিশালী আন্দোলন হিসেবে গড়ে উঠে। নিম্নে খিলাফত আন্দোলনে মওলানা মোহাম্মদ আলীর ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. খিলাফত কর্মসূচি ঘোষণা : মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং এ আন্দোলনে ভারতের মুসলিম জনসাধারণ সম্পৃক্ত করে আপসহীন সংগ্রামের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসকগণকে শীঘ্রই মুসলিম বিরোধী কার্যকলাপ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।

২. ব্রিটিশ সরকারের নিকট দাবী উত্থাপন: ব্রিটিশ জনসাধারণকে খিলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য বুঝতে মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে একজন মুসলিম প্রতিনিধি দল ইংল্যান্ডে গমন করেন। উক্ত প্রতিনিধি দল এ সময়ে ব্রিটিশ সরকারের কাছে তাদের দাবি-দাওয়া প্রস্তাবাকারে পেশ করেন যা খিলাফত আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

দাবিসমূহ নিম্নে দেয়া হলো:

(ক) খিলাফতকে ভেঙে বিভক্ত করা যাবে না।

(খ) খিলাফতের পবিত্র স্থানের দায়িত্বে খলিফাই নিযুক্ত হবেন।

(গ) আরব উপদ্বীপের উপর মুসলমানদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে কোনো প্রকার প্রটোকল ছাড়াই।

(ঘ) খলিফার হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে যাতে করে ইসলাম ধর্মের স্বার্থরক্ষা সম্ভব হয়।

৩. হিন্দু-মুসলিম ঐক্য স্থাপন: প্রথম অবস্থায় খিলাফত আন্দোলন মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় পরিচালিত হলেও পরবর্তীতে তা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে। খিলাফত আন্দোলনে। মহাত্মা গান্ধী সমর্থনে ভারতের হিন্দু- মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে তোলে। এর ফলে খিলাফত আন্দোলন খুব দ্রুত সমগ্র ভারতে ছাড়িয়ে পড়ে এবং চরম আকার ধারণ করে।

৪. মুসলিম জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করা: খিলাফত আন্দোলনে মুসলিম জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে মোহাম্মদ আলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ধর্মীয় নেতা হওয়ায় তিনি সহজেই করে নীতি দ্বারা মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন। তার বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে মুসলমানগণ দলে দলে খিলাফত আন্দোলনে যোগদান করেন।

৫. আন্দোলনের গতিশীলতা দান: খিলাফত আন্দোলনকে গতিশীল করতে মোহাম্মদ আলীর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তার নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন সংঘটিত হয়। তিনি কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক দলকে তার আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হন, যা খিলাফত আন্দোলনকে গতিশীলতা দান করে।
মওলানা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন বহু দূর এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা বাস্তব রূপ নিতে পারেনি। বিভিন্ন কারণে শেষপর্যন্ত আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে খিলাফত ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। যদি ও শেষ অবাধে এ আন্দোলন ব্যর্থ হয়। তথাপি ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে এ আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। হিন্দু- মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ বৃহত্তম আন্দোলনের অভিজ্ঞতা এ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিভাত হয়ে উঠে। আর এক্ষেত্রে মোহাম্মদ আলীর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তাই ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে মওলানা মোহাম্মদ আলী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বরূপ।