দায়িত্বশীল সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।

অথবা, দায়িত্বশীল সরকার কি? এর বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।

অথবা, দায়িত্বশীল সরকার কাকে বলে?

উত্তর: ভূমিকা: দায়িত্বশীল সরকার পদবাচ্যটি বর্তমানে প্রায় সকলের কাছে কমবেশি পরিচিত। ভারতবর্ষের জনগণ দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করছিল। অবশেষে ১৯১৭ সালের ২০ আগস্ট তৎকালীন ভারত সচিব ভারতে প্রথম দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন কমলসভায়। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের দ্বারা প্রাদেশিক প্রশাসনে দ্বৈতশাসন প্রতিষ্ঠা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে ব্রিটিশ ভারতের কেন্দ্র ও প্রদেশে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের পদক্ষেপ গৃহীত হয়।

দায়িত্বশীল সরকার ব্যবস্থা: দায়িত্বশীল সরকার বলতে সেই শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায় যে সরকার তার নীতি ও কার্যাবলির জন্য প্রত্যক্ষভাবে দেশের আইনসভার কাছে দায়ী থাকেন। সরকারের শাসন সংক্রান্ত সমুদয় ক্ষমতা মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত থাকে। রাষ্ট্রপ্রধান হলো একজন নামেমাত্র শাসক এবং তিনি সর্বাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মোতাবেক স্বীয় দায়িত্ব পালন করেন। একটি নির্বাচিত আইনসভা মন্ত্রিসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এককথায় দায়িত্বশীল সরকার হচ্ছে সে সরকার যে সরকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে জনগণের কাছে দায়ী থাকেন।

দায়িত্বশীল সরকারের বৈশিষ্ট্য: দায়িত্বশীল সরকারের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে আমরা এর কতকগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই।

১. এরূপ সরকার ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ তথা মন্ত্রিমণ্ডলী এর যাবতীয় অফিসিয়াল নীতি ও কার্যাবলির জন্য সরাসরিভাবে আইনসভার কাছে দায়ী থাকবেন।

২. মন্ত্রিসভার সদস্যগণ হবেন আইনসভার সদস্য এবং আইনসভার সমর্থন হারালে তাঁরা পদত্যাগ করতে বাধ্য থাকবেন।

৩. রাষ্ট্রপ্রধান হবেন একজজন নামমাত্র শাসক। তিনি সবসময় এবং সকল অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে স্বীয় দায়িত্ব পালন করেন। দেশের প্রকৃত শাসন ক্ষমতার মালিক হবেন মন্ত্রিমণ্ডলী।

৪. আইনসভার সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন এবং তারা সরকারের একটি বিভাগ হিসেবে জনগণের কাছে দায়ী থাকবেন।

৫. আইনসভার সমর্থন অসমর্থনের উপর মন্ত্রিদের কার্যাবলি নির্ভর করে।

৬. মন্ত্রিদের দৈনন্দিন কাজে রাষ্ট্রপ্রধান কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করেন না।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, দায়িত্বশীল সরকার তার কার্যাবলির জন্য প্রত্যক্ষভাবে দেশের আইনসভার কাছে দায়ী থাকবেন এবং শাসন সংকান্ত সমূদয় ক্ষমতা মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত থাকবে। সরকার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে জনগণের কাছে দায়ী থাকবে।