অথবা, ১৯৪২ সালের ক্রিপস মিশন পরিকল্পনার শর্তাবলি তুলে ধর।
অথবা, ১৯৪২ সালের ক্রিপস মিশনের শর্তাবলি উল্লেখপূর্বক বর্ণনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: ১৯৪২ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ডের যোগদান অন্যদিকে ভারতবর্ষে মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং কংগ্রেসের স্বাধীন সার্বভৌম অখণ্ড রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ভারতে একটি গোলাযোগপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়ে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪২ সালে ২৩ মার্চ ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ভারতের সমস্যা সমাধানে প্রেরণ করেন। ক্রিপস রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে ব্যর্থ হলে নিজেই নিজস্ব পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। যা ক্রিপস মিশন নামে উল্লেখযোগ্য।
ক্রিপস প্রস্তাবের শর্তাবলি: ১৯৪২ সালে ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবগুলো ছিল সুদূরপ্রসারি এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
১. যুক্তরাষ্ট্রীয় ইউনিয়ন গঠন: ক্রিপস মিশন পরিকল্পনার প্রস্তাবে বলা হয়, ভারতে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ইউনিয়ন হবে এবং যে যে ডোমিনিয়ন গঠন করা হবে তা অন্যান্য ডোমিনিয়নের সমকক্ষ হবে।
২. ডোমিনিয়ন প্রতিষ্ঠা: এ পরিকল্পনায় আরো বলা হয় যে, ভারতকে পৃথক ডোমিনিয়নের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং যে ডোমিনিয়ন গঠন করা হবে তা অন্যান্য ডোমিনিয়নের সমকক্ষ হবে।
৩. নতুন সংবিধান প্রণয়ন : মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় বলা হয় যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ভারতবর্ষের জনগণের চাহিদা অনুযায়ী একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি গণপরিষদ গঠন করা হবে।
৪. ব্রিটিশ রাজা-রানির কর্তৃত্ব বৃদ্ধি: ১৯৪২ সালের ক্রিপস মিশন পরিকল্পনায় বলা হয় যে, গণপরিষদ কর্তৃক নতুন সংবিধান রচনা না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বযুদ্ধজনিত কারণে ভারতের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পরিচালনা ব্রিটিশ সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকবে। তবে ভারত সরকারের হাতে সামরিক, নৈতিক ও বস্তুগত সম্পদকে সংগঠিত করার দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে।
৫. শর্তসাপেক্ষে শাসনতন্ত্র গ্রহণ: বর্ণগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অধিকার নিশ্চয়তার জন্য গণপরিষদ ও ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৪২ সালের ক্রিপস কর্তৃক ‘ক্রিপস মিশন’ ভারতবাসীর জন্য একটি ভালো উদ্যোগ ছিল। আর ভারতবাসীর জন্য ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল সম্ভাবনার কিছু দিক ছিল। কিন্তু ভারতের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রেষারেষির কারণে শেষ পর্যন্ত এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। তথাপি ক্রিপস মিশনের শর্তগুলো ভারতবাসীর জন্য কল্যাণকর ছিল এবং ভারতবাসীর অধিকার ও স্বাধীনতার পথকে উন্মুক্ত করেছিল।
সুতরাং এ প্রস্তাবকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখা যায় না।