ক্রিপস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণসমূহ লিখ।

অথবা, ক্রিপস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণ কি ছিল?

অথবা, ক্রিপস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণগুলো তুলে ধর।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতীয় উপমহাদেশের শাসনতান্ত্রিক অগ্রগতির ইতিহাসে যদিও ক্রিপস প্রস্তাব পূর্ববর্তী সবগুলো সাংবিধানিক ফর্মুলার চেয়ে অধিকতর উন্নত ছিল। তবুও এতে ভারতের সংবিধান যুদ্ধ শেষ হবার পূর্ব পর্যন্ত ঠিক আগের মতোই থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়। মূলত এ কারাণেই ভারতের দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ক্রিপস প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে। উভয় দলই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

(ক) কংগ্রেস প্রত্যাখানের কারণ: কংগ্রেসের প্রত্যাখানের কারণসমূহ নিম্নরূপ:

১. কংগ্রেস অখণ্ড ভারতের জন্যই সংগ্রাম করেছিল। কিন্তু ক্রিপসের প্রস্তাব ছিল অখণ্ড ভারত গঠনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। প্রদেশগুলো ইচ্ছা করলে ভারতীয় ইউনিয়নের বাইরে থাকতে পারবে কংগ্রেস তীব্রভাবে এ প্রস্তাব বিরোধিতা করে।

২. কংগ্রেস মনে করে যে, ক্রিপস প্রস্তাবে প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গণপরিষদ কর্তৃক প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্রের ধারণা ছিল সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির স্থলে রাজার মনোণিত ব্যক্তিরা গণপরিষদে আসন লাভকরবেন। কংগ্রেস এটি মেনে নিতে পারেনি।

৩. সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা কংগ্রেসের মনঃপুত হয়নি।

৪. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ রাখার প্রস্তাবও কংগ্রেসের মনঃপুত হয়নি।

(খ) মুসলিম লীগের প্রত্যাখ্যান: মুসলিম লীগের প্রত্যাখ্যানের কারণসমূহ নিম্নরূপ:

১. ক্রিপস প্রস্তাবের মুখবন্ধে একটি সর্বভারতীয় ইউনিয়ন গঠনের কথা বলা হয়। লীগের মতে, প্রস্তাবে মূলত অখণ্ড ভারতের কথা বলা হয়েছে। হিন্দু ও মুসলমানদের নিয়ে ভারতীয় ইউনিয়ন। গঠনের প্রস্তাব মুসলিম লীগের কাছে ন্যায়সংগত মনে হয়নি।

২. মুসলিম লীগ মুসলমান সদস্য নিয়ে প্রথম গণপরিষদ গঠনের পক্ষপাতী ছিল। কিন্তু ক্রিপস প্রস্তাবে ভারত ইউনিয়ন গঠনের লক্ষ্যে একটি গণ-পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়।

৩. ক্রিপস প্রস্তাবে গণ-পরিষদের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনি এলাকার সুপারিশ করা হয়নি।

৪. এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।

৫. ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বলা হয়নি। স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে প্রস্তাবে কিছুই

(গ) অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রত্যাখ্যান: কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ছাড়াও ভারতের অন্যান্য সংখ্যালঘু দল ও গোষ্ঠীসমূহ ক্রিপস প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে। হিন্দু মহাসভা ক্রিপস প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। কারণ এ প্রস্তাবের মধ্যে তারা পাকিস্তান সৃষ্টির স্পষ্ট আভাস পায়। শিখরাও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, পাঞ্জাব যেহেতু মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ সে কারণে প্রদেশটি পাকিস্তানে যোগদান করবে। তাছাড়া ভারতীয় ইউনিয়ন হতে পাঞ্জাবের বিচ্ছিন্নকরণ শিখদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। বরং ভারতীয় ইউনিয়ন ভুক্ত থেকে একটি নির্দিষ্ট এলাকা জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। হরিজন নেতৃবৃন্দও ক্রিপস প্রস্তাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এভাবে ক্রিপস প্রস্তাবটি সর্বমহল কর্তৃক প্রত্যাখ্যান হয়।