অথবা, জন লকের সার্বভৌমত্ব তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা: বর্তমান কালে সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সার্বভৌমিকতা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয়সমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। সার্বভৌমিকতা রাষ্ট্রের ব্যক্তিত্বস্বরূপ। এটি রাষ্ট্রকে বিশিষ্টতা দান করেছে। Prof. Lasli বলেছেন, “It is by possession of sovereignty that the state is distinguished from all other forms of human association.”
সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে জন লক: জন লক রাজার অবাধ ক্ষমতা ও রাজার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের ধারণাকে সমর্থন করেন নি। তিনি অবাধ রাজতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন। জন লক সীমাবদ্ধ বা নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন। ১৬৯০ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Two Treatises on Civil Government’ প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে ধ্যানধারণার পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পাওয়া যায়। উদীয়মান বুর্জোয়া সমাজের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে জন লক ছিলেন বিশেষভাবে। পরিচিত। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ রাজনৈতিক দর্শন উপস্থাপিত করে তিনি পুঁজিবাদী সমাজের বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছেন। তাঁর মতানুসারে, সার্বভৌম ক্ষমতা চরম বা অবিভাজ্য নয়। প্রজাসাধারণই হলো মূল ক্ষমতার অধিকারী এবং শাসক হলেন প্রজাসাধারণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বা মতামতের উপর নির্ভরশীল।
লকের সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য: লকের সার্বভৌম তত্ত্বটি বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়:
১. লক তার সার্বভৌম তত্ত্বে দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন যে, আইনসভাই হলো সার্বভৌম। রাষ্ট্রের সকল জনগণ
আইনসভার অধীন। তিনি তার রাষ্ট্রচিন্তায় আইনসভাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ বলে উল্লেখ করেছেন।
২. লক রাষ্ট্রের জনগণকে চরম সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলেছেন। তার মতে, কতকগুলো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য জনগণ আইনসভা তৈরি করেছে। তাই সার্বভৌম বা চূড়ান্ত ক্ষমতা ন্যস্ত থাকবে জনগণের হাতে।
৩. জন লক সার্বভৌমত্বকে চূড়ান্ত বিপ্লব ও মতামত বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, গণসার্বভৌমিকত্ব না থাকলে গণতন্ত্র ফলপ্রসূ হয় না।
৪. লকের সার্বভৌমতাকে দু’টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যেমন- তাৎক্ষণিক সার্বভৌমতা ও শেষ পর্যায়ের সার্বভৌমতা। আইনসভা হলো তাৎক্ষণিক সার্বভৌমতা। তিনি বলেছেন, যদি কখনো আইনসভা স্বাধীনতা ও সম্পত্তি থেকে জনগণকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করে, তাহলে সমগ্র সমাজ তার চরম ক্ষমতা বলে নিজেকে রক্ষা করবে। এটাই হলো শেষ পর্যায়ের সার্বভৌমতা।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, জন লকের সার্বভৌমত্ব তত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ আসন দখল করে আছে। মূলত তার সার্বভৌমত্ব তত্ত্বের মাধ্যমে আধুনিক গণতন্ত্রের বিকাশ সাধিত হয়। তাঁর মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা অবিভাজ্য নয়। জনগণই হলো সব ক্ষমতার অধিকারী এবং শাসক হলেন জনগণের মতামতের উপর নির্ভরশীল।