অধিকারের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

অথবা, অধিকারের শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা কর।

অথবা, অধিকার কত প্রকার ও কী কী? আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: সাধারণত অধিকার বলতে কোন দাবি বা স্বত্বকে বুঝায়। যা রাষ্ট্র বা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কেবল রাষ্ট্রের মধ্যেই অধিকার ভোগ করা যায়। রাষ্ট্রের আইন দ্বারা অধিকার সংরক্ষণ করা হয়। অধিকার আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। প্রকৃতি অনুসারে অধিকার তিন প্রকার। যথা: ১. প্রাকৃতিক অধিকার ২. নৈতিক অধিকার এবং ৩. আইনগত অধিকার।

অধিকারের শ্রেণিবিভাগ: নিম্নে অধিকারের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. প্রাকৃতিক অধিকার: মানুষ যেসব অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তাই প্রাকৃতিক অধিকার (Natural Rights),
মূলত প্রাকৃতিক অধিকার বলতে সেসব অধিকারকে বুঝায় যা মূলত এমনকি রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে ভোগ করতো। জনলক এর মতে, প্রাকৃতিক অধিকার কখনো বিনষ্ট হয় না। এরূপ অধিকার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিরও ঊর্ধ্বে। জীবন, সম্পত্তি ও স্বাধীনতার অধিকার হচ্ছে মানুষের প্রাকৃতিক অধিকার।

২. নৈতিক অধিকার: মানুষের বিবেক ও বিবেচনার উপর ভিত্তি করে যেসব অধিকারের সৃষ্টি হয় তাই নৈতিক অধিকার। নৈতিক অধিকার নীতি, আদর্শ ও বিবেক বিবেচনার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন-প্রবীণদের শ্রদ্ধা, সেবা শুশ্রুষা, গরিব ও অসহায়দের সাহায্য সহযোগিতা ইত্যাদি নৈতিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত।

৩. আইনগত অধিকার: রাষ্ট্রের আইন দ্বারা স্বীকৃত ও সংরক্ষিত অধিকারসমূহকে আইনগত অধিকার বদে। আইনগত অধিকারের পিছনে আইনের সমর্থন থাকায় কেউ এসব অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে কিংবা বাধা দিলে রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করে। আইনগত অধিকারকে আবার কতকগুলো ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা: (ক) সামাজিক অধিকার, (খ) রাজনৈতিক অধিকার, (গ) অর্থনৈতিক অধিকার, (ঘ) সাংস্কৃতিক অধিকার এবং (ঙ) মৌলিক অধিকার। নিম্নে এসব অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

ক. সামাজিক অধিকার: মানুষ সুসভ্য’ ও সংঘবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত যেসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করে তাকে সামাজিক অধিকার বলে। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সামাজিক নিরাপত্তা ও সমাজকল্যাণকর সুযোগ সুবিধাকেই সামাজিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন-শিক্ষার অধিকার, ধর্মের অধিকার, স্বাস্থ্যরক্ষার অধিকার স্বাধীন গতিবিধির অধিকার, সামাজিক সাম্যের অধিকার ইত্যাদি।

খ. রাজনৈতিক অধিকার: রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের অধিকারকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। নাগরিক হিসেবে ব্যক্তি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব অধিকার ভোগ করে সেগুলো হলো। ভোটদানের অধিকার, নির্বাচন করতে অধিকার, সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণের অধিকার, সরকারের সমালোচনা করার অধিকার ইত্যাদি।

গ. অর্থনৈতিক অধিকার: অর্থনৈতিক অধিকার বলতে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব থেকে মুক্তিলাভের অধিকারতে বুঝায়। কর্মের অধিকার, ন্যায্য মজুরি পাওয়ার অধিকার, অরকাশ লাভের অধিকার ইত্যাদি মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। অর্থনৈতিক অধিকার ব্যতীত ব্যক্তির পক্ষে সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তাই অর্থনৈতিক অধিকার মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ঘ. সাংস্কৃতিক অধিকার: ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে পরিভ্রমণের জন্য তার যেসব সুযোগ সুবিধা সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত তাকে সাংস্কৃতিক অধিকার বলে। যেমন- সংগীত চর্চা, নৃত্যচর্চা, অভিনয় ইত্যাদি।

ঙ. মৌলিক অধিকার: মানুষের মৌলিক অধিকার বলতে সেসব অধিকারকে বুঝানো হয় যেগুলো ছাড়া মানুষ জীবনযাপন করতে পারে না। যেমন-খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, অধিকার ছাড়া মানুষ সুষ্ঠুভাবে সমাজে বসবাস করতে পারে না। চুক্তিবাদী দার্শনিকগণ শুধুমাত্র প্রাকৃতিক অধিকারের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তবে আধুনিক দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ মানুষের নৈতিক ও আইনগত অধিকারের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মোটকথা, এসব অধিকার ছাড়া মানুষ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারে না। তাই অধিকার মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।