অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক আলোচনা কর।

অথবা, অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে যেসব সাদৃশ্য রয়েছে তা উল্লেখ কর।

অথবা, অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সুগভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। অধিকার হলো প্রত্যেক ব্যক্তির বা জনসমষ্টির ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী এবং রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত সুযোগ সুবিধা। আর কর্তব্য হচ্ছে এমন এক নীতিনিষ্ঠ আচরণ বা দায়িত্ববোধ যা সকল সময়ই মানুষ পালন করতে বাধ্য থাকে। নাগরিকগণ রাষ্ট্রের কাছ থেকে যেমন অধিকার ভোগ করে তেমনি নাগরিকদেরও কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। বস্তুত কর্তব্য ছাড়া অধিকার পরিপূর্ণ হয় না।

অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সম্পর্ক বা সাদৃশ্য : নিয়ে অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যেকার সম্পর্ক বা সাদৃশ্য আলোচনা করা হলো:

১. উৎপত্তিগত সম্পর্ক: অধিকার ও কর্তব্য উভয়ের উৎপত্তি সমাজের মধ্যে। সমাজ হলো অধিকার ও কর্তবোর সংরক্ষক ও অভিভাবক। সমাজ ও রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকারের বিনিময়ে আমরা কর্তব্য পালন করে থাকি। কাজেই দেখা যাচ্ছে, অধিকার ও কর্তব্যের উৎপত্তি এক ও অভিন্ন।

২. অধিকারের মধ্যেই কর্তব্য বিদ্যমান: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি বহুল প্রচলিত উক্তি হলো “Right imply duties” অর্থাৎ অধিকারের মধ্যেই কর্তব্য নিহিত। সমাজবদ্ধ মানুষ একে অপরের উপর কতকগুলো দাবি করে। এ দাবি স্বীকৃত হলে অধিকারের সৃষ্টি হয়। আর এগুলো স্বীকার করার অর্থ হলো কতকগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের অঙ্গীকার করা। মূলত পারস্পরিক এ দাবিসমূহের একদিক হলো অধিকার এবং অপরদিক হলো কর্তব্য।

৩. অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর নির্ভরশীল: রাষ্ট্রই নাগরিকদের অধিকারের পথ দেখায় এবং যথাযথ অধিকার সংরক্ষণ করে। অন্যদিকে নাগরিক যদি তার কর্তব্য সঠিকভাবে পালন না করে তাহলে রাষ্ট্র অচল হয়ে পড়বে এবং নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ করতে পারবে না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর নির্ভরশীল।

৪. কর্তব্য পালনের মাধ্যমে অধিকার অর্জন করতে হয়: ব্যক্তি সত্তা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় অধিকার অর্জন করতে হয়। কর্তব্য পালনের মাধ্যমে তা অর্জন করা যায়। সুতরাং অধিকার ও কর্তব্য পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ।

৫. একজনের অধিকার অন্যের কর্তব্য: একজন নাগরিক যে অধিকার ভোগ করে অন্যজন তা সংরক্ষণের জন্য কর্তব্য পালন করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হবহাউস বলেছেন, “ধাক্কা না খেয়ে পথ চলার অধিকার যদি আমার থাকে, তাহলে তোমার কর্তব্য হলো আমাকে প্রয়োজনমতো পথ ছেড়ে দেয়া।” সুতরাং একথা বলা যায়, একজনের কাছে যা অধিকার অন্যজনের কাছে তা কর্তব্য।

৬. একই বস্তুর দুটো দিক: অধিকারের ধারণার মধ্যেই কর্তব্যের ধারণা নিহিত। মোটকথা, অধিকার ভোগ করতে হলে কর্তব্য পালন করতে হবে। অধ্যাপক লাস্কি (Laski) বলেন, “যে কর্তব্য পালন করতে পারবে না সে অধিকার ভোগ করতে পারবে না।” সুতরাং একথা বলা যায়, অধিকার ও কর্তব্য একই বস্তুর দুটি দিক।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। অধিকার ভোগ করতে হলে কর্তব্য সম্পাদন করা অত্যাবশ্যক। প্রকৃতপক্ষে একজনের অধিকারের পরিধি অন্য সকলের প্রতি কর্তব্যবোধের দ্বারা সীমাবদ্ধ।