নীতি অনুশীলনের কার্যাবলি সংক্ষেপে লেখ।

অথবা, সামাজিক নীতি অনুশীলনের কার্যক্রম উল্লেখ কর।

অথবা, সামাজিক নীতি অনুশীলনের কার্যক্রম সম্পর্কে কি জান?

অথবা, সামাজিক নীতি অনুশীলনের কার্যক্রম কি ছিল?

উত্তর: ভূমিকা: সাধারণ নীতি অনুশীলন বলতে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত নীতি প্রণয়নের কার্যক্রমকে বুঝানো হয়ে থাকে। সমাজকর্ম বিশ্বকোষের মতে, সমাজকর্ম অনুশীলনে সামাজিক নীতি সমাজকর্মীকে সরাসরি সেবা, পরামর্শ, সমষ্টি সংগঠন, পরিকল্পপনা ও প্রশাসন ইত্যাদিতে যারা জরিত সামাজিক নীতি পরিবর্তনের বা উন্নয়নের তত্ত্ব ও অনুশীলন পন্থা এনে দেয়। সামাজিক নীতি পরিকল্পনা সমাজকর্মে হস্তক্ষেপ দ্বারা প্রণয়ন করে সামাজিক নীতি কর্মসূচি এবং প্রকল্প ইত্যাদি পরিবর্তনের জন্য এবং এগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশনা দের। এরূপ হস্তক্ষেপসমূহের লক্ষ্য হলো সমষ্টি ও সমাজের সমস্যার প্রতিরোধ, নিরসন ও সমাধান যা ব্যক্তি ও পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সমাজসেবা ও জনসমষ্টি উন্নয়ন সাধন করে।

সামাজিক নীতি অনুশীলনের কার্যাবলিঃ নীতি অনুশীলনবিদরা গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদান করে থাকেন। নীতি অনুশীলনকারীদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়।

নিচে নীতি অনুশীলনবিদদের কার্যাবলি বর্ণনা করা হলো:

১. নীতি বিষয়ক কার্যপ্রণালি নির্ধারণ: নীতি অনুশীলনবিদদের নীতি বিষয়ক কার্যপ্রণালী নির্ধারণ করতে হয়। অনুশীলনবিদদের নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যপ্রণালির দায়িত্ব পালন করে থাকেন। নীতি প্রণয়নের কার্যপ্রণালি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। নীতি বিষয়ক কার্যপ্রণালি অনুশীলনবিদদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

২. সমস্যার সংজ্ঞা নির্ধারণ: অনুশীলনবিদগণ নীতির উপস্থাপন বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সমস্যা সংজ্ঞায়িত করার কাজ করে থাকেন। নীতি প্রণয়নের সাথে জরিত সমস্যার সংজ্ঞা, প্রভাব, পরিধি, কারণ প্রভৃতি দিক সম্পকে বিশ্লেষণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ জনসংখ্যানীতি তৈরি করার সময় জনসংখ্যার সংজ্ঞা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ, ভৌগলিক অবস্থান জনসংখ্যার ভয়াবহতা ইত্যাদি দিক সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে।

৩. প্রস্তাব তৈরিকরণ: নীতি অনুশীলনবিদদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রস্তাব তৈরি করা। এ পর্যায়ে বিকল্প নীতির বিকল্পসমূহ চিহ্নিত করা হয় এবং বিকল্পনীতিগুলোর সুবিধা-অসুবিধা যাচাই করে প্রস্তাব আকারে পেশ করা হয়। এই প্রস্তাব কখনো সহজ হতে পারে আবার কখনো জটিল হতে পারে। নীতির প্রস্তাব জটিল হয় তখন বৃহৎ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় আবার নীতির প্রস্তাব যদি বৃহৎ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় আবার নীতির প্রস্তাব যদি সহজ হয় তখন একক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

৪. নীতি বিধিবদ্ধকরণ: অনুশীলনবিদগণ নীতি বিধিবদ্ধকরণ কাজ করে থাকেন। প্রস্তাবিত নীতি অনুমোদনের পর্যায়ে নীতি বিধিবদ্ধকরণ কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকে। নীতি অনুমোদন কৌশল জটিল প্রকৃতির হলে অধিক সময় ও অধিক সম্পদ ব্যয় হয়ে থাকে। স্বৈরতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার চেয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নীতি অনুমোদনের সময় বেশি লাগে। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সকলের মতামত নিতে হয়। কিন্তু স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নীতি অনুমোদন সময় কম লাগে। কারণ এখানে কোনো কাজের জন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না।

৫. নীতি বাস্তবায়ন: নীতি অনুশীলনবিদদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নীতি বাস্তাবায়ন করা। প্রণীত নীতি বাস্ত বায়িত হচ্ছে কিনা নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অনুশীলনবিদদের দৃষ্টি রাখতে হয়। নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনুশীলনবিদগণ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। নীতি বাস্তবায়নের জন্য অনুশীলনবিদদের প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়।

৬. প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক জ্ঞানঃ নীতি অনুশীলনবিদদের সকলের কাজ হলো নীতি মূল্যায়ন করা। নীতি মূল্যায়ন বা যাচাইকরণ অনুশীলনবিদদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অনুশীলনবিদরা নীতি বিশ্লেষণ দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসূচি মূল্যায়ন করেন। কর্মসূচি নীতি বাস্তবায়নের বাহন হিসেবে কাজ করে থাকেন।

৭. বিকল্প নির্ধারণঃ নীতি অনুশীলনকারীরা নীতি প্রণয়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন বিকল্প বিষয়সমূহ নির্ধারণ করে থাকেন। এটি তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এজন্য নীতি অনুশীলনবিদরা প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকেন।

৮. নীতি বিশ্লেষণঃ নীতি অনুশীলনবিদদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নীতি বিশ্লেষণ করা। এই নীতি বিশ্লেষণ জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি দৃষ্টি রেখে করা হয়। নীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে নীতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা অর্জিত হয়।

৯. সমন্বয় সাধন: নীতি অনুশীলনবিদরা নীতি প্রণয়নের সাথে জড়িত বিষয়সমূহ সমন্বয় সাধন করে থাকেন। নীতির সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহের মধ্য সমন্বয় ব্যবস্থা জোরদার না থাকলে নীতি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়। তাই সমন্বয় সাধন নীতি অনুশীলনকারীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

১০. নীতি অনুমোদনঃ নীতি অনুশীলনকারীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কাজ হলো নীতির অনুমোদন। নীতি’ অনুমোদনের জন্য অনুশীলনকারীদেরকে প্রত্যেকের সাথে আলাপ-আলোচনা ও সভা করতে হয়।

১১. মূল্যায়নঃ নীতি অনুশীলনকারীদের আরেকটি অন্যতম কাজ হলো নীতির মূল্যায়ন। নীতি মূল্যায়নের মাধ্যমে নীতি অনুশীলনকারী এর সফলতা ব্যর্থতা খুঁজে বের করতে পারেন। নীতি মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক নীতি সমাজস্থ মানুষের অনুভূত প্রয়োজনের ভিত্তিতে তাদের কল্যাণে সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়। সমাজের সাথে সংশ্লিষ্ট এসব নীতিগুলো সমাজের প্রথা ও মূল্যবোধের প্রেক্ষিতে প্রণীত হয়ে থাকে। সমাজের এই প্রথা ও মূল্যবোধগুলো বিভিন্ন সামাজিক অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উপাদানের সাথে জড়িত। ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, সামাজিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখিত উপাদানগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।