সামাজিক নীতি বাস্তবায়নের কৌশলগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা, সামাজিক নীতি বাস্তবায়নের পদ্ধতিগুলো উল্লেখ কর।

অথবা, সামাজিক নীতি বাস্তবায়নের কি কি পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়।

ভূমিকাঃ সামাজিক নীতি “নীতি” প্রণয়নের বৃহত্তর ক্ষেত্রের একটি সুনির্দিষ্ট দিক মাত্র। একটি রাষ্ট্রের অনেক ধরনের নীতি থাকতে পারে। যেমন- পররাষ্ট্র নীতি, প্রতিরক্ষা নীতি, রাজস্ব নীতি, যুবনীতি প্রভৃতি এগুলো বিভিন্নভাবে ক্রিয়াশীল। এসব নীতির মাঝে যেসব নীতি সামাজিক নীতি সামাজিক সমস্যা ও গণমানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সাথে সংশ্লিষ্ট সেগুলো সামাজিক নীতির সুনির্দিষ্ট গভীর আওতাধীন বলে বিবেচিত।

সামাজিক নীতি বাস্তবায়নের কৌশল: সামাজিক নীতি বাস্তবায়নের কতগুলো কৌশল অবলম্বন করা যায়।

নিম্নে সামাজিক নীতি বাস্তবায়নের কৌশলগুলো আলোচনা করা হলোঃ

১. সমাজকল্যাণ কর্মসূচি: সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি সামাজিক নীতির আলোকে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গ্রহণ করা হয়। তাই সমাজকল্যাণ মূলক কর্মসূচিকে সামাজিক নীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিচেনা করা হয়।

২. সামাজিক প্রশাসন: সামাজিক প্রশাসনের মাধ্যমে সামাজিক নীতি প্রণীত হয়ে থাকে। সামাজিক নীতিকে সমাজসেবায় পরিণত করাই হলো সামাজিক প্রশাসন। সামাজিক প্রশাসনের মাধ্যমেই সামজিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্ত বায়নের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।

৩. জাতীয় পরিকল্পনাঃ জাতীয় পরিকল্পনার আলোকে সামাজিক নীতি প্রণীত হয়ে থাকে। সামাজিক নীতি বাস্ত বায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এসকল কর্মসূচি জাতীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। সামাজিক নীতি জাতীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। সামাজিক নীতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে হলে জাতীয় পরিকল্পনার বিশ্লেষণ অপরিহার্য।

৪. সামাজিক আইন: সামাজিক আইনের দ্বারা নীতি প্রণীত হয়ে থাকে। সামাজিক আইন সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সামাজিক নীতি বাস্তবায়নে সামাজিক আইন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন নারী উন্নয়নের জন্য নারী নীতি সম্পর্কে জানতে হলে নারী আইনগুলো অধ্যয়ন করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ নারী আইনগুলো হলো ১৯৮০ সালের যৌতুক বিরোধী আইন, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন ইত্যাদি।

৫. রাষ্ট্রীয় সংবিধানঃ সামাজিক নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের সকল নীতি, পরিকল্পনা কর্মসূচি সংবিধান অনুযায়ী করা হয়। দেশের সংবিধানের ওপর সামাজিক নীতি নির্ভরশীল। সামাজিক নীতি সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেয়া হয় সংবিধানে।

৬. সমন্বয় সাধনঃ সামাজিক নীতির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বয় খুবই জরুরি। সামাজিক নীতির সাথে সরকার ও বিষয়সমূহের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে নীতি সম্পর্কে বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সময়, শ্রম, অর্থ বেশি লাগে। তাই সামাজিক নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে সকল ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন আবশ্যক।

৭. প্রশিক্ষণঃ প্রশিক্ষণ সামাজিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিপায়। ফলে তারা নীতি প্রণয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন।

৮. গবেষণা: সামাজিক নীতির ক্ষেত্রে গবেষণার গুরুত্ব অনেক। গবেষণার মাধ্যমে সামাজিক নীতি বাস্তবায়নের বাধাসমূহ চিহ্নিত করা যায়। এই সকল বাধা দূর করে নীতি বাস্তবায়নের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহজ হয়।

৯. মূল্যায়ন : মূল্যায়নের ওপর নীতির সফলতা নির্ভরশীল, মূল্যায়নের মাধ্যমে সামাজিক নীতির ক্রটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। এই সকল ত্রুটি দূর করে নীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক নীতি হচ্ছে যেসব সুশৃঙ্খল নিয়ম-কানুন বা নির্দেশ যা সমাজ কল্যাণমূলক কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করা হয়।