অথবা, সার্বভৌমত্বের বহুত্ববাদী ধারণা সমালোচনা বর্ণনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: সামাজিক বিজ্ঞানের কোন তত্ত্বই সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত কিংবা সমালোচনামুক্ত নয়, একথা হলফ করে বলা যায়। আধুনিক রাষ্ট্রতান্ত্রিক বিশ্বে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণা নিয়ে একত্ববাদীদের যেমন রয়েছে বিভিন্ন যুক্তি, তেমনি রয়েছে তাদের অনেক সমালোচনা; যার ফলশ্রুতিরূপে এসেছে সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী ধারণা। যদিও সার্বভৌমত্বের বহুত্ববাদ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও এর কিছু সমালোচনা আছে।
বহুত্ববাদের সমালোচনা: সার্বভৌমিকতা সম্পর্কে বহুত্ববাদের ধারণা বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে। কোকার, কোহেন ব্যক্তিগণ বহুত্ববাদের সমালোচনা করেছেন। নিম্নে তা দেয়া হলো:
১. রাষ্ট্রের ভূমিকা: রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংঘের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের মীমাংসা, এদের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রকে এমন অনেক কাজ করতে হয় যা অন্য সংগঠনের পক্ষে সম্ভব নয়। অধ্যাপক লাস্কি এর মতানুসারে, আইনগত বিচারে অস্বীকার করা যাবে না যে, রাষ্ট্রের এমন কিছু অঙ্গ আছে যার কর্তৃত্ব অপরিসীম। করেছে। এর ফলে সামাজিক ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট হচ্ছে।
২. সংহতির বিরোধী: বহুবাদ রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতাকে বিভক্ত করে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি
৩. আইন ও নৈতিকতার পার্থক্য: একত্ববাদের মতানুসারে সার্বভৌমিকতার ধারণা হলো সম্পূর্ণ আইনগত। কিন্তু বহুত্ববাদিগণ রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার আইনগত ও নৈতিক ধারণার মধ্যে কোন পার্থক্য করেন নি।
৪. অস্পষ্ট ধারণা: বহুত্ববাদীদের ধারণাটি অস্পষ্ট। বহুত্ববাদীরা আইনের উৎস হিসেবে বিবেকের অনুশাসন, সামাজিক সংহতি প্রভৃতির কথা বলেন এবং আইনের উপর প্রভাব হিসেবে সামাজিক ন্যায়বিচার, জনমত, ব্যক্তির ভালোমন্দ প্রভৃতির কথা বলেন।
৫. লাফির মত: বহুত্ববাদী লাঙ্কিও এ তত্ত্বের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, শ্রেণিসম্পর্কের প্রকাশ হিসেবে রাষ্ট্রের প্রকৃতিকে এ মতবাদ যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারে নি। তার মতে, “It did not sufficiently realize the nature of the state as an expression of class relation.”
৬. কোকারের মত: কোকার (Cocker) এর মতানুসারে আইন প্রণয়ন ও আইন প্রয়োগের জন্য রাষ্ট্রের অস্তিত্ব। রাষ্ট্র অন্যান্যদের উপর যেসব বিধি-নিষেধ আরোপ করে তা রাষ্ট্রের উপর আরোপ করা যায় না। সম-অপ্রকৃতিবিশিষ্ট অন্যকোন কর্তৃপক্ষের কাছে রাষ্ট্রকে দায়িত্বশীল করা যায় না।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, আমরা দু’টি তত্ত্ব বিশ্লেষকগণের মতামত পর্যালোচনা করে একথা বলতে পারি যে, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব, স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্নে সার্বভৌম বা চূড়ান্ত ক্ষমতা কেবল রাষ্ট্রেরই আছে এবং রাষ্ট্রেরই থাকা উচিত। এদিক থেকে বিবেচনা করলে সার্বভৌমত্বের একত্ববাদই গুরুত্বের দাবিদার। অপরদিকে, রাষ্ট্রের মতো রাষ্ট্রের অন্যান্য সংঘ বা সংগঠন ও জনগণের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে তাদেরও একটা ইতিহাস আসে। এ থেকে দেখা যায়, রাষ্ট্রই একমাত্র নিয়ন্তা নয়। এভাবে বহুত্ববাদের কথা চলে আসে।