অথবা, গ্রিক নগররাষ্ট্র সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, গ্রিক নপররাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তরঃ ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রচিন্তার যে ক্রমবিকাশ ও ইতিহাস পাওয়া যায় তার উৎস হলো প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তা, যা তৎকালীন নগররাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। মিসের নগররাষ্ট্র সম্পর্কে Earnest Barker द ‘Greek Political Theory’ গ্রন্থে যথার্থই বলেছেন, “ব্রিসীয় যুক্তিবাদের শান্ত ও স্বচ্ছে পরিবেশের মধ্যেই রাষ্ট্রচিন্তার প্রথম সূত্রপাত ঘটে।” বস্তুত ইউরোপে যে রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশ ঘটেছে এবং বর্তমান বিশ্ব যে রাষ্ট্রচিন্তার দ্বারা উৎকর্ষতা লাভকরেছে তার উৎস ও মৌলিকত্ব গ্রিক নগররাষ্ট্রকেন্দ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার অবদান মাত্র।
গ্রিক নগররাষ্ট্রের ধারণা: আধুনিক পরিভাষায় নগর বা রাষ্ট্র বলতে যা বুঝায় প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলোতে তার কোন বৈশিষ্ট্যই ছিল না। প্রকৃত অর্থে তারা ছিল এক একটি সম্প্রদায় (Community) কিংবা একটি রাষ্ট্র সংস্থা (Common wealth)। আধুনিক কালে নগর বলতে যেমন- লন্ডন, নিউইয়র্ক, কলকাতা বা ঢাকাকে বুঝায়, গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলো তেমনটি ছিল না। নগররাষ্ট্রের জীবনব্যবস্থা ছিল অবিচ্ছেদ্য ও পূর্ণাঙ্গ। ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক বা সামাজিক (Private or social life) বলে কোনকিছু ছিল না। অভিন্ন লক্ষ্য এবং অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে নগররাষ্ট্রের নাগরিকবৃন্দ আবদ্ধ ছিল। নগররাষ্ট্র বলতে প্রাচীর ঘেরা সংঘবদ্ধ জনপদ এবং এর বাইরে ভূমিসীমা নিয়ে ক্ষুদ্র ভূখণ্ডকে বুঝানো হতো, যেখানে সকল নাগরিকবৃন্দ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের স্বতন্ত্র সীমারেখা না টেনে সম্মিলিত জীবনযাপন করতো। প্রাচীন গ্রিক নগররাষ্ট্র সম্বন্ধে বিশদ ধারণা পেতে হলে নগররাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা প্রয়োজন।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাজনৈতিক চিন্তাধারার সুদীর্ঘ ইতিহাসে নগররাষ্ট্র সম্পর্কে গ্রিকদের প্রবর্তিত নগররাষ্ট্রের ধারণা থেকে বর্তমান আধুনিক নগররাষ্ট্রের বিকাশ সাধিত হয়েছে। গ্রিসের শ্রেষ্ঠ নগররাষ্ট্র হিসেবে এথেন্স স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রবর্তক হিসেবে পৃথিবীতে এত সুপরিচিত। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রত্যক্ষ করা যায় তা মূলত মিক রাষ্ট্রদর্শনের ফল।