অথবা, স্টোরিক বলতে কী বুঝ? স্টোয়িক দর্শনের ব্যাখ্যা কর।
অথবা, স্টোয়িক পরিচয় দাও।
অথবা, গ্রীক সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা।
উত্তর: ভূমিকা: এরিস্টটলের তিরোধান ও মহাবীর আলেকজান্ডারের নেতৃত্বাধীন ম্যাসিডোনীয় সাম্রাজ্যের রিস্ত ার লাভের ফলে গ্রিসের রাজনৈতিক জীবনে যে নতুন চিন্তাধারার বিকাশ সাধিত হয় রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে সেটি হেলেনিস্টিক চিন্তাধারা নামে পরিচিত। এ চিন্তাধারার যেসব মৌলিক পরিবর্তন সূচিত হয় সেগুলো প্রধানত এপিকিউরীয়বাদ ও স্টোয়িকবাদের দুই নবতর তত্ত্বের মধ্যে বাস্তব প্রতিফলন লাভ করে। এ দুই তত্ত্ব পুরাতন মূল্যবোধের অবসান ঘটিয়ে নতুন মূল্যবোধের জন্ম দেয় এবং এ মূল্যবোধ বহু শতাব্দী ধরে তার প্রাধান্য ও প্রভাব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়।
স্টোয়িকবাদ: মিসের চারটি হেলেনিস্টিক স্কুল বা দার্শনিক মতবাদের মধ্যে স্টোয়িক স্কুল হচ্ছে চতুর্থ ও শেষ স্কুল। এ স্কুল থেকে যে মতবাদ ও দার্শনিক তত্ত্ব প্রচারিত হয় ইতিহাসে তা স্টোয়িক দর্শন বা স্টোয়িকবাদ নামে পরিচিত। এ স্টোয়িকবাদের প্রতিষ্ঠাতা হলেন জেনো। এ মতবাদটি ছিল এথেনীয় মতবাদগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ ও সর্বশেষ মতবাদ। মূলত এ মতবাদের লালন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন, সবকিছুই প্রধানত অগ্নিসীয় অধিবাসীদের দ্বারা সম্পন্ন হয়। ফলে এর মধ্যে অনেক অগ্নিসীয় ভাবধারা প্রাধান্য লাভ করে।
স্টোয়িকদের পরিচয়: স্টোয়িকবাদ বা নির্বিকারবাদের প্রতিষ্ঠা জেনো সাইপ্রাসের অন্তর্গত সিটিমাস শহরে খ্রিস্টপূর্ব ৩৪২ অব্দে জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি এথেন্সে এসে বসবাস শুরু করেন। জেনো ছিলেন নৈরাশ্যবাদী দার্শনিক Crates এর ছাত্র এবং এর ফলে তাঁর মতবাদের মধ্যে সিনিসিজমেরও প্রভাব ছিল বেশ প্রবল। জেনো, সক্রেটিস ও প্লেটোর দর্শন দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। একটি গাড়ি বারান্দার নিচে বসে জেনো তাঁর শিষ্যদের মাঝে বক্তৃতা দিতেন এবং বাইরের কোন প্রকার কোলাহল তাঁকে বিবৃত করতে পারত না। এ গাড়ি বারান্দাকে গ্রিক ভাষায় স্টোয়া (Stoa) বলে। সে থেকে জেনো এবং তাঁর অনুসারীদের প্রবর্তিত দর্শনকে নির্বিকারবাদী দর্শন বা স্টোয়িক দর্শন বা স্টোয়িকবাদ বলে। উল্লেখ্য, স্টোয়িকবাদের অপর একজন প্রবক্তা ছিলেন ক্রিসিপাস। এ দুই দার্শনিকের প্রচেষ্টার ফসল হচ্ছে স্টোয়িক স্কুল, যেখান থেকে উৎসারিত হয়েছে স্টোয়িক মতবাদ।
স্টোয়িক দর্শনের বিভিন্ন পর্যায়: নির্বিকারবাদী দর্শন বা স্টোয়িক দর্শনকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়। প্রথম স্তরে ছিলেন জেনো ও ক্রিসিপাস, যাঁরা স্টোয়িকবাদের কতকগুলো সাধারণ সূত্র বা মূলমন্ত্র প্রচার করেন।
দ্বিতীয় স্তরে প্যানিটিয়াস ও প্রোসিডোনিয়াস মধ্য স্টোয়ার নাম করা দার্শনিক। স্টোয়িকবাদের ব্যাপারে প্যানিসিয়াসের অবদান হলো এই যে, সংশয়বাদী কার্নিডসের আক্রমণে স্টোয়িকবাদ যখন জর্জরিত হয়ে পড়ে তখন তিনি এ মতবাদকে পরিমার্জিত করে তাকে রোমান আইনবিদদের কাছে সহজবোধ্য করে তোলে।
তৃতীয় বা শেষ পর্যায়ে রোমান স্টোয়ার সন্ধান পাওয়া যায়।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রদর্শনে স্টোয়িকদের দর্শনের প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হলেও এ কথা সত্য যে, তাঁদের দর্শনে প্লেটো, এরিস্টটলের মতো একটি সুসংহত রাষ্ট্রতত্ত্ব পাওয়া যায় না। তবে আজ আমরা যে আন্তর্জাতিকতাবাদ, বিশ্বরাষ্ট্র, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বহুত্ব ও সৌহার্দ্যের কথা বলি তা অনেক বছর পূর্বে স্টোয়িক দার্শনিকরা বলে গেছেন। Prof. Sabine এর ভাষায় বলা যায়, “It was this conviction that made stoicism a moral and a social force.” স্টোয়িকরা তাদের অবদানের জন্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।