অথবা, প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তার প্রকৃতি বলতে কী বুঝ?
অথবা, প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তার ধরন উল্লেখ কর
উত্তরঃ ভূমিকা: রাষ্ট্র সর্বাপেক্ষা সার্বজনীন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। আর এ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল যুগ যুগ ধরে। তাই মানুষ যুগ যুগ ধরে এ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করে আসছে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে। রাষ্ট্রচিন্তার Concept টি তাই আধুনিক মানবসভ্যতার সাথে একান্তভাবে সম্পর্কিত।
প্লেটোর রাষ্ট্রচিত্তার প্রকৃতি: রাষ্ট্রচিন্তার প্রকৃতি এর কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তুতে নিবন্ধ। এটা মানুষ, মানুষের অধিকার, মানবসমাজ, রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি আবর্তিত। এ বিষয়গুলো একজন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ, রাষ্ট্র দার্শনিকের মনে যেভাবে স্থান পায় সেটিই রাষ্ট্রচিন্তার প্রকৃতি হিসেবে প্রতিভাত হয়।
মানুষের সকল কাজকর্ম ও ক্রিয়াকর্মের উৎস হচ্ছে তার মন। কর্মকাণ্ডের উৎস হিসেবে মানুষের মনের দুটি অবস্থা রয়েছে। একটি হচ্ছে যে, মানুষের মনে কোন বিশেষ ধরনের চিন্তাধারা বদ্ধমূল থাকে না। নানারূপ বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত চিন্ত াধারা প্রবিষ্ট হতে থাকে এবং তার মধ্যে যে চিন্তাটি বেশি শক্তিশালী, সেটিই হয় চিন্তার প্রেরণাদানকারী।
দ্বিতীয় অবস্থাতে মনের পাতায় একটা বিশিষ্ট চিন্তাধারা দৃঢ়মূলভাবে স্থান করে থাকে। চিন্তাধারা সেভাবেই প্রভাবিত হয়।
বিশ্ব পরিমণ্ডলে একজন রাষ্ট্রচিন্তাবিদের মনে যখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়াবলি তথা ঘটনাবলি অনুপ্রবেশ করে, তখন সে চিন্তাবিদ তার মনে আগত বা অনুপ্রবিষ্ট চিন্তারাজীকে বিদ্যমান স্থির ভাবধারার প্রেক্ষিতে যেভাবে মূল্যায়নপূর্বক অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন, সেটিই হয়ে থাকে তার রাষ্ট্রচিন্তা তথা তত্ত্ব। বস্তুত এজন্যই মানুষের বৈচিত্র্য স্বভাবজাত কারণে একই বিষয়ে এক এক ধরনের চিন্তাভাবনার কথা ব্যক্ত করে থাকে। এটিই বলতে গেলে রাষ্ট্রচিন্তা তথা স্ব-স্ব চিন্তা বিষয়ক গতিপ্রকৃতি।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বর্তমানে আমরা রাষ্ট্রদর্শনের যে সৌধ দেখতে পাই তা একদিনে নির্মাণ হয় নি, বরং এটা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দার্শনিকদের কষ্টার্জিত ফসল। এ ফসল ফলাতে গিয়ে অনেক দার্শনিক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন, আবার অনেক দার্শনিক দেশ ছেড়েছেন, আবার অনেক দার্শনিক তাদের জীবন দিয়েছেন। এভাবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রচিন্তার ভাণ্ডার পরিপূর্ণ হয়েছে। আর এ জ্ঞানভাণ্ডার থেকে যুগে যুগে নাগরিক, রাষ্ট্রনায়ক, সমাজবিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ আহরণ করেছেন তাদের পথ চলার পাথেয় যা মানবসভ্যতার ইতিহাসকে সমৃদ্ধশালী করেছে।