অথবা, এরিস্টটল কে ছিলেন?
অথবা, এরিস্টটল কে?
অথবা, এরিস্টটল সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তরঃ ভূমিকা: পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তায় এরিস্টটল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি প্রাচীন যুগে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর দর্শন আধুনিক যুগেও বিশেষ প্রভাব রয়েছে। বস্তুত রাষ্ট্রচিন্তা, রাষ্ট্র ও সরকারের প্রসঙ্গত রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় বাস্তবভিত্তিক ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ তাঁকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মর্যাদা দিয়েছে। তাঁর রাষ্ট্রদর্শনের অন্যান্য দিক যেমন- বিপ্লব তত্ত্ব, আইনের শাসন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে স্বতন্ত্র বিষয়ের মর্যাদা, শিক্ষা সম্পর্কিত ধারণা, আদর্শ রাষ্ট্র ইত্যাদি গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করা যায়। এরিস্টটলের অবদানের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অধ্যাপক বার্কার তাঁর ‘The Politics of Aristotle’ গ্রন্থে বলেছেন, “Aristotle was too rich in adaptability, too poor in original fancy, to shine as a star of first magnitude among the creators of new ideas.”
এরিস্টটলের পরিচয়: খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ অব্দে মেসিডোনিয়ার নিকটবর্তী স্ট্যাগিরা নগরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন রাজ দরবারের একজন চিকিৎসক। এ সুযোগে তিনি রাজকীয় পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন। তাই এরিস্টটলের মতবাদের মধ্যে অভিজাততান্ত্রিক চিন্তাচেতনা পরিলক্ষিত হয়। এরিস্টটল তাঁর পিতার সাথে রাজকীয় পরিবেশে থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে জ্ঞান লাভ করেন। তার বয়স যখন ১৮ বছর, তখন তাঁর পিতার মৃত্যু হলে তিনি এথেন্সে গিয়ে প্লেটোর একাডেমির ছাত্র হন। প্লেটোর ন্যায় যোগ্য শিক্ষকের ছাত্র হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। প্লেটোর একাডেমি পরিত্যাগের পর বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেন এবং শেষে ৩৩৫ খ্রিঃপূর্বাব্দে এথেন্স শহরে প্রত্যাবর্তন করে দর্শনচর্চার একটি কেন্দ্র স্থাপন করেন যা লাইসিয়াম (Lyceum) নামে খ্যাত। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পরিচালনায় ছিলেন। এরিস্টটল ৩২৩ খ্রিঃ পূর্বাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলির মধ্যে দি পলিটিক্স (The Politics), দি কনস্টিটিউশন, (The Constitution), দি লজিক (The Logic), দি রেটোরিক (The Rhetoric), দি কনসটিটিউশন অব এথেন্স (The Constitution of Athens) অন্যতম।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, এরিস্টটলের চিন্তাধারা যুগে যুগে বিভিন্ন দার্শনিককে অনুপ্রাণিত করেছে। তেরো শতকের চিন্তাধারা তাঁরই প্রভাবে অভূতপূর্বভাবে আন্দোলিত হয়। চার্চ প্রথমে এরিস্টটলকে অবিশ্বাস করলেও পরবর্তী পর্যায়ে জ্ঞানীদের শিক্ষক বলে চিহ্নিত করেন। তাঁর সুচিন্তিত ও পরীক্ষামূলক অভিমতসমূহ বিশ্ব জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। এরিস্টটলের মতবাদকে বাদ দিলে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই এরিস্টটলকে নিঃসন্দেহে আমরা একজন রাষ্ট্রচিন্তানায়ক হিসেবে গণ্য করতে পারি। উপর্যুক্ত কারণেই তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।