এরিস্টটলের মতে সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণিবিভাগ ছকের মাধ্যমে দেখাও।

অথবা, এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণিবিভাগ দেখাও।

উত্তরঃ ভূমিকা: বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল তাঁর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘The Politics’ এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে সংবিধান বা সরকারের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ বর্ণনা করেছেন। তাঁর এ বর্ণনার মূল লক্ষ্য, উত্তম সংবিধান কোনটি তা নির্ণয় করা। কিন্তু এরিস্টটলের মতে, উত্তম সংবিধান কোনটি তা আলোচনার পূর্বে সংবিধান সম্পর্কে সাধারণভাবে তাঁর ধারণা কি এবং তিনি কিভাবে সংবিধানের শ্রেণিবিন্যাস করেছেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন।

সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ: এরিস্টটল সরকারের সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ করার জন্য দু’টি মানদণ্ড ব্যবহার করেন। যথা: শাসকের সংখ্যা ও শাসকের গুণ। আবার শাসকের গুণগত মানদণ্ডে সংবিধানকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। স্বাভাবিক গুণ ও বিকৃত গুণ। স্বাভাবিক গুণের আবার তিনটি রূপ রয়েছে। যথা: রাজতন্ত্র, অভিজাত তন্ত্র ও ন্যায়তন্ত্র। বিকৃত গুণের তিনটি রূপ রয়েছে যথা: স্বৈরতন্ত্র, কতিপয়তন্ত্র বা ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্র।

উল্লিখিত শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা: শাসকের সংখ্যার মানদণ্ড অনুযায়ী যখন রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা একজনের দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন তাকে একজনের শাসন বলে। আবার যখন কিছুসংখ্যক ব্যক্তি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয়, তখন তাকে কয়েকজনের শাসন বলে। আবার যে শাসনব্যবস্থায় সমগ্র, জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, তখন তাকে বহুজনের শাসন বলে। শাসকের গুণগত মানদণ্ড অনুযায়ী সকলের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়ে সরকার একের হাতে ন্যস্ত হলে তাকে রাজতন্ত্র বলে। আর কতিপয় ব্যক্তির হাতে থাকলে তাকে অভিজাত তন্ত্র বলে। আবার জনসাধারণের হাতে থাকলে তাকে পলিটি বা ন্যায়তন্ত্র বলে। অপরদিকে, ব্যক্তিস্বার্থে বা শ্রেণিস্বার্থে পরিচালিত হয়ে যদি সরকার এক ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত থাকে, তাকে স্বৈরতন্ত্র বলে। আবার ক্ষমতা কতিপয় ব্যক্তির হাতে থাকলে তাকে কতিপয়তন্ত্র বলে। আবার ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকলে তাকে গণতন্ত্র বলে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, এরিস্টটল তাঁর সুবিখ্যাত ‘দি পলিটিক্স’ গ্রন্থে সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন এবং সকল শ্রেণির সংবিধানের মধ্যে পলিটি বা মধ্যতন্ত্রকে সর্বোত্তম সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা এরিস্টটল মনে করেন, “Polity is a compromise between oligarchy and democracy.” এরিস্টটল তাঁর গ্রন্থে সরকার, সংবিধান ও রাষ্ট্রকে একই অর্থে ব্যবহার করেছেন।