এরিস্টটলের বিপ্লব নিবারণের উপায়সমূহ আলোচনা কর।

অথবা, এরিস্টটলের বিপ্লব নিবারণের পদ্ধতি বা দিকগুলো ব্যাখ্যা কর।

অথবা, এরিস্টটলের বিপ্লব নিবারণের উপায়সমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: এরিস্টটল তাঁর The politics গ্রন্থে সরকারের স্থায়িত্ব রক্ষায় বিপ্লব নিবারণের বিভিন্ন উপায় বা পদ্ধতি নির্দেশ করেছেন। বিপ্লব নিবারণের ক্ষেত্রে এরিস্টটলের এসব ধারণার অসাধারণ গুরুত্ব রয়েছে। বর্তমানকালের আলোকে বিচার করলেও তাঁর এসব বিপ্লব নিবারণমূলক মতবাদ আধুনিক বলে মনে হয়। এরিস্টটল তাঁর The politics গ্রন্থে বিপ্লবের সাধারণ ও বিশেষ কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। শুধু তাই না তিনি বিপ্লব নিবারণের কারণগুলোও আলোচনা করেছেন।

বিপ্লব নিবারণের উপায়সমূহ: যেসব উপায়ে বিপ্লব নিবারণ করে সরকারের স্থায়িত্ব রক্ষা করা যায়, তাও এরিস্টটল সুচারুরূপে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, বিপ্লব নিবারণের উপায়গুলো নিম্নরূপ:

১. আইন মেনে চলার উপযুক্ত ব্যবহা: রাষ্ট্রের আইন যাতে জনগণ মেনে চলে তার উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।

২. গুণী ব্যক্তির স্বীকৃতি ও বিরোধীদের অবিচার না করা: যাদের হাতে শাসনক্ষমতা নেই, তাদের উপর যেন
অবিচার না করা হয় এবং বিশেষত তাদের মধ্যে যে গুণী ব্যক্তি তার প্রতিভার উপযুক্ত স্বীকৃতি যেন দেয়া হয়।

৩. দেশপ্রেম সৃষ্টি বরা ও শাসকদের কূটকৌশল: দেশবাসীকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজন হলে শাসকগণ দেশবাসীকে মিথ্যা বিপদের ভয় দেখিয়ে সন্ত্রস্ত রাখবেন, যাতে দেশ রক্ষার কার্যে তারা বিনিদ্র প্রহরীর ন্যায় সদা সতর্ক থাকে।

৪. সুনির্দিষ্ট শাসনকাল ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ: মর্যাদাগত অসাম্যের দরুন নাগরিকগণের মধ্যে যে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়, তা দমন করা আবশ্যক। এজন্য শাসনব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন শাসকগণ অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে না পারে। সে উদ্দেশ্যে শাসকের কার্যকলাপ সীমিত করতে হবে। বিশেষ ব্যক্তি বা দল অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হয়ে যাতে অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামো এমনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে, যাতে দরিদ্র শ্রেণির সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়।

৫. শাসনব্যবস্থার অনুকূল শিক্ষাব্যবস্থা: শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি অনুযায়ী দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠন করা প্রয়োজন এবং নাগরিকগণ বাল্যকাল থেকে যাতে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় সেরূপ শিক্ষা তাদের দিতে হবে।

৬. সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা: রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে যদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বিরাজ না করে তাহলে বিপ্লব মাথাচড়া দিয়ে উঠতে পারে না। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া উচিত নয়।

৭. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত না রেখে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে একে বণ্টন করে দেয়া উচিত। তাহলে বিপ্লবের আশংকা কম থাকে।

৮. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: রাষ্ট্রে যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে বিপ্লবের আশংকা একেবারেই কমে যাবে।

৯. দুর্নীতিমুক্ত ক্ষমতা: রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ব্যবস্থায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ যদি দুর্নীতি মুক্ত থাকে তাহলে বিপ্লবের কোন ইস্যু পাওয়া যাবে না।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনায় এরিস্টটল বিপ্লব নিবারণের যেসব উপায়ের কথা বলেছেন এগুলো যদি যথাযথভাবে কার্যকর করা যায় তাহলে বিপ্লবের অবসান ঘটানো যাবে। আর সমাজে বিপ্লবের অবসান ঘটার মাধ্যমেই রাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান হয়।