অথবা, এরিস্টটল মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনব্যবস্থা সমর্থন করেন- ব্যাখ্যা কর।
অথবা, এরিস্টটল মধ্যবিত শাসন ব্যবস্থাকে কেন সর্বোত্তম শাসনব্যবস্থা বলেছেন।
উত্তরঃ ভূমিকা: এরিস্টটল এর মতে, Polity বা মধ্যতন্ত্র হলো উত্তম শাসনব্যবস্থা। তিনি সকল প্রকার সংবিধানের তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করে একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে এসে পৌছেছেন। তাঁর মতে, Polity বা মধ্যতন্ত্র হলো সর্বোত্তম শাসনব্যবস্থা। জনকল্যাণের মহৎ উদ্দেশ্যে সাধারণ জনগণের দ্বারা পরিচালিত শাসনকে সাধারণভাবে Polity বলে। বিশেষ অর্থে Polity বলতে এমন এক ধরনের শাসনব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে চরম প্রকৃতির ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের দোষগুলোকে বর্জন করে তাদের গুণসমূহের সংমিশ্রণ ঘটে।
G. H. Sabine এর মতে, “মধ্যতন্ত্র এমন এক ধরনের শাসনব্যবস্থা যেখানে এককভাবে শুধু ধনীরা নয় কিংবা এককভাবে শুধু দরিদ্ররা নয়, বরং ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের উপাদানসমূহের সুসমন্বিত অংশের প্রাধান্য বিরাজ করে।”
মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনের সপক্ষে যুক্তিসমূহ: এরিস্টটল মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনের পক্ষে যেসব যুক্তি দিয়েছেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. দক্ষতা বেশি: এরিস্টটল এর মতে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা না খুব বেশি ধনী, না খুব বেশি গরিব। রাষ্ট্রে এদের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। আবার সাধারণ জনগণের দক্ষতা অবশ্যই একজনের শাসন বা কতিপয়ের শাসন থেকে বেশি হবে। রাষ্ট্র পরিচালনায়, রাষ্ট্রীয় কল্যাণ সাধনে এ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অবদান তাই বেশি প্রাধান্য পাবে। এজন্য এরিস্টটল সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনের পক্ষপাতী।
২. উপযুক্ত সরকার: মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ধনীর উগ্রস্বভাব এবং গরিবের দাসোচিত মনোবৃত্তি নেই। তাই রাষ্ট্রীয় শাসনকার্য পরিচালনায় বেশি উপযুক্ত।
৩. সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার: মধ্যবিত্ত শ্রেণির সরকার হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার। আর সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় বেশি।
৪. বিপ্লব প্রসঙ্গ: এরিস্টটল এর মতে, ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্র উভয় ব্যবস্থায় চরম এবং উভয়ই সীমা লঙ্ঘন করে ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ফলে বিপ্লবের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় বিপ্লব ঠেকিয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্ষমতায় আসে।
৫. আস্থাভাজন: মধ্যবিত্ত শ্রেণি ধনী এবং গরিব উভয় শ্রেণির আস্থাভাজন বিধায় মধ্যবিত্ত শ্রেণি যড়যন্ত্রের শিকার হয় না। ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় না।
৬. উন্মুক্ত অবস্থা: এরিস্টটল বলেছেন, মধ্যবিত্ত অবস্থা হচ্ছে মানবিক গুণাবলি বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ।
৭. রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য রক্ষা: মধ্যবিত্ত সরকারই অধিকতর নিরাপদ এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ।
৮. নির্ভরযোগ্য: মধ্যবিত্ত শ্রেণি যেহেতু খুব বেশি ধনীও নয় আবার খুব বেশি গরিবও নয় তাই তাদের হাতে নিশ্চিতভাবে ক্ষমতা অর্পণ করা যায়।।
৯. শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত: এরিস্টটল বলেছেন, গ্রিসের বড় বড় নীতি ও আইন প্রণেতা যেমন- সলোন, লাইকারগাম প্রভৃতি সকলেই মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাই বলা যায়, রাজনৈতিক দিক থেকেও মধ্যবিত্ত শ্রেণির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত। উপর্যুক্ত যুক্তিগুলোর প্রেক্ষিতেই এরিস্টটল মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনের পক্ষপাতী।
সমালোচনা: এরিস্টটল এর মধ্যতন্ত্র যথেষ্ট সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। যেমন-
১. ভালো সরকার নয়: Bowle বলেছেন, Aristotle এর মধ্যতন্ত্র আসলে কোন ভালো সরকার নয়, তবে ভালো শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
২. বাস্তবে প্রয়োগ কঠিন: এরিস্টটল এর মধ্যতন্ত্র বাস্তবে প্রয়োগ করা মোটেই সহজ নয় যদিও তিনি এটাকে সর্বাপেক্ষা বাস্তবসম্মত বলেছেন।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, Aristotle polity বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনের পক্ষপাতী ছিলেন। Aristotle তাঁর সময়ের প্রেক্ষিতে Polity-কে সর্বোত্তম ও বাস্তবসম্মত বলে অভিহিত করেছেন। কারণ দেখা গেছে, অতীতে যেসব রাষ্ট্রের শাসনভার একটি শক্তিশালী ও ন্যায়নিষ্ঠ মধ্যবিত্ত শ্রেণি কর্তৃক পরিচালিত হয়েছে তাদের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা সহজে বিনষ্ট হয় নি। আর এখানেই Aristotle এর Polity এর যথার্থতা নিহিত।