দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্মসূচিগুলো মূল্যায়ন কর।

অথবা, দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্মসূচিসমূহ ব্যাখ্যা কর।

অথবা, দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কার্যক্রমগুলো আলোচনা কর।

ভূমিকা: পরপর একটি পঞ্চবার্ষিকী ও একটি দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সুদৃঢ় অর্থনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণে সক্ষম হয়েছিল। এরই সাদাসিদে অনেক নির্ভরশীল তথ্য, উপাত্ত ও বিশেষজ্ঞতার
উপর ভিত্তি করে ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার নিম্নোক্ত সমাজকল্যাণ কর্মসূচি গৃহীত হয়:

১. পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচিঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ অসুবিধাগ্রস্ত মানুষ যেমন সকল বহির্ভূত কিশোর এবং যুবক মহিলা, ভূমিহীন প্রভৃতিদের শিক্ষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মসূচিকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এজন্য এখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয় ২৭ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা। এক্ষেত্রে ১০৪টি উপজেলায় গ্রামীণ সমাজ সেবা কার্যক্রমের প্রসার এবং ১৯৬টি কমিউনিটি সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

২. স্বেচ্ছামূলক সংস্থার জন্য সেবা কার্যক্রমঃ দেশের স্বেচ্ছামূলক সংগঠনকে উৎসাহ সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান এ কর্মসূচির অন্তর্গত। এ খাতে সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ১৭ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা।

৩. ভিক্ষুক ও ভবঘুরে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন: এ কর্মসূচির আওতায় সমষ্টি সংগঠনের ভিক্ষাবৃত্তি উচ্ছেদ এবং ভবঘুরেদের প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসনের জন্য কেন্দ্র স্থাপনের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এ উদ্দেশ্যে এ খাতে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

৪. শিশুকল্যাণ কর্মসূচিঃ এ কর্মসূচির আওতায় শিশুদের কল্যাণে শিশু সনদ ও তৎসংলগ্ন সকলের উন্নয়ন এবং বেবীহোম স্থাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এজন্য বরাদ্দ করা হয় ৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা।

৫. মানব সম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচিঃ উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মানব সম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচি গৃহীত হয়। এ খাতে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

৬. সংশোধনমূলক কার্যক্রম: অপরাধ ও কিশোর অপরাধ সংশোধনের জন্য এ কর্মসূচির আওতায় সংশোধনমূলক
সেবার জন্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন, প্যারোল সার্ভিস প্রবর্তন এবং প্রবেশন ও আফটার কেয়ার শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গৃহীত হয়। এ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৪ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা।

৭. প্রশাসনিক দক্ষতাসৃষ্টিমূলক কর্মসূচিঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সমাজসেবা দফতরের প্রশাসনিক দক্ষতা সৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ সমাজকল্যাণ কর্মসূচি হিসেবে গৃহীত হয়। এ খাতে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল্যায়ন:

১. প্রাক্কলিত ব্যয়ঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যয় কম হয়েছিল। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১৭,২০০ কোটি টাকা কিন্তু ব্যয় হয়েছিল ১৫,২৯৭।

২. প্রবৃদ্ধিঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ছিল প্রবৃদ্ধি। এ পরিকল্পনার প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। দ্বিতীয় পরিকল্পনার প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৩.৮%

৩. দারিদ্র্য কমানোঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ছিল দারিদ্র্য কমানো। কিন্তু বাস্তবে দারিদ্র্যের হার কমানো সম্ভব হয়নি।

৪. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ছিল জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস করা। এই পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১.৮% কিন্তু অর্জিত হয়েছিল ২.৪%।

৫. যুব কল্যাণঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার যুবকল্যাণের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছিল। অনেক যুবককে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার বিধান করা হয়েছিল।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্মসূচি মূল্যায়ন করলে দেখা যায় এটি প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার চেয়ে সফল হয়েছে বটে কিন্তু পুরোপুরি সফলতা অর্জন করতে পারেনি।