অথবা, রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে পরিষদ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, পরিষদ আন্দোলনের কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে? সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
উত্তর: ভূমিকা: পরিষদ আন্দোলন মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। মধ্যযুগের শেষ পর্যায়ে সংঘটিত এ আন্দোলন রাষ্ট্রচিন্তাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। সাধারণ দৃষ্টিতে পরিষদ আন্দোলন শুধুমাত্র একটি আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি পেলেও যুক্তির বিচারে এ আন্দোলন একটি তত্ত্বও বটে। কেননা পরবর্তী সময়ে এ আন্দোলনের উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন রাষ্ট্র দার্শনিক তাদের মতবাদ গড়ে তোলেন। অবশ্য শেষ অবধি এ আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল কিন্তু পরবর্তী সময়ের রাষ্ট্রচিন্তা বিকাশের ক্ষেত্রে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
পরিষদ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য: সমস্যা নিরসনের উদ্দেশ্যে পরিষদ আন্দোলন সংঘটিত হলেও এ আন্দোলনের কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে পরিষদ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:
১. পরিষদ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এ আন্দোলন মহা অন্তর্বিরোধ অবসানের পক্ষে কাজ করেছিল।
২. এ আন্দোলনের প্রবক্তাগণ সার্বভৌম ক্ষমতা কাউন্সিলের হাতে ন্যস্ত করার পক্ষে ছিলেন। তাঁদের মতে, পোপ হচ্ছেন গির্জার একজন নির্বাহি প্রধান এবং তিনি পরিষদের নিকট হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন এজেন্ট মাত্র।
৩. মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় পরিষদ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই প্রথম ঘোষিত হয়, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এ আন্দোলন পোপ ও উচ্চপদস্থদের নিকট হতে ক্ষমতা কেড়ে জনগণের হাতে প্রদান করে। তাই জনগণের হাতে ক্ষমতা প্রদানের এ ঐতিহাসিক ঘটনাকে পরিষদ আন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তার স্বরূপ ও অবয়বের অবসান হতো না, যদি পনের শতকে পরিষদ আন্দোলন শুরু না হতো। যদিও এ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় তথাপি এর প্রভাব পনেরো শতক থেকে শুরু করে সতেরো, আঠারো শতক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মূলত পরিষদ আন্দোলনের ফলে সমগ্র বিশ্বব্যাপী যে সংস্কার আন্দোলন পরিচালিত হতে থাকে তার ফলেই আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রচিন্তার আধুনিক যুগ। সুতরাং রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মধ্যযুগের পরিষদ আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম তা বলাই বাহুল্য।