সেন্ট টমাস একুইনাসকে মধ্যযুগের এরিস্টটল বলা হয় কেন?

অথবা, সেন্ট টমাস একুইনাসকে কেন মধ্যযুগের এরিস্টটল বলা হয়? আলোচনা কর।

অথবা, সেন্টটমাস একুইনাস মধ্যযুগের এরিস্টটল। উক্তিটি পর্যালোচনা কর।

অথবা, কেন তুমি সেন্ট টমাস একুইনাসকে মধ্যযুগের এরিস্টটল হিসেবে বিবেচনা করবে? যুক্তি দেখাও।

অথবা, রাষ্ট্রদর্শনে সেন্ট টমাস একুইনাসের অবদান মূল্যায়ন কর।

উত্তর: ভূমিকা: সেন্ট টমাস একুইনাস রাষ্ট্রদর্শন অধ্যয়নকালে পরিষ্কার প্রতীয়মান হয় যে, তিনি গ্রিক দর্শনের পুরোধা এরিস্টটলের সাথে মধ্যযুগীয় খ্রিস্টধর্মের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছেন। উভয় দর্শনেই তিনি বৈরিতাকে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। এছাড়া কতিপয় ক্ষেত্র ছাড়া একুইনাস এরিস্টটলের সকল বিষয়ে অভিন্ন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।

মধ্যযুগের এরিস্টটল হিসেবে একুইনাস: নিম্নলিখিত কারণে তাকে মধ্যযুগের এরিস্টটল বলা যেতে পারে:

১. শ্রমবিভাগ: এরিস্টটলের পদাঙ্ক অনুসরণ করে একুইনাস মানবসমাজকে পারস্পরিক শ্রম বিনিময় ব্যবস্থা মনে করেছেন। এরিস্টটলের ন্যায় তিনি আরও বলেছেন, উত্তম জীবননির্বাহ করাই সমাজের বা রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য।

২. রাষ্ট্রের উৎপত্তি: রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কেও একুইনাস এরিস্টটলের পথ অনুসরণ করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যায়ে খ্রিস্টীয় তত্ত্বের বাণী দ্বারা তা সম্পূর্ণ করেন।

৩. আইন: সেন্ট টমাস একুইনাসের আইন সম্পর্কে ধারণা এর সার্বজনীন বৈধতার ধারণা এরিস্টটলের নিকট হতে গ্রহণ করেছেন। তিনি মনে করতেন, আইন ছাড়া রাষ্ট্র পূর্ণাঙ্গভাবে চলতে পারে না।

৪. সরকারের শ্রেণিবিভাগ : সরকারের শ্রেণিবিভাগে একুইনাস এরিস্টটলের অনুগামী। তিনি রাজতন্ত্রকে সর্বোত্তম সরকার এবং স্বৈরতন্ত্রকে সর্বাপেক্ষা খারাপ পদ্ধতি বলেছেন।

৫. সমাজ সম্পর্কে: সমাজ সম্পর্কে আলোচনায় একুইনাস এবং এরিস্টটলের মধ্যে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এরিস্টটলকে অনুসরণ করে তিনি বলেছেন, সৎ জীবনযাপনের নিমিত্তে সমাজের বিভিন্ন মানুষের পারিবারিক বিনিময় একান্ত প্রয়োজন। কোন মানুষ স্বয়ংসম্পন্ন নয়। একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। এ নির্ভরশীলতা ছাড়া অভিন্ন কল্যাণ সাধিত হতে পারে না।

৬. শাসনব্যবস্থা: এরিস্টটল শাসনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে উত্তম বলে অভিহিত করেছেন। একুইনাস এ ব্যাপারেও এরিস্টটলের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে আইনের মাধ্যমে সরকার পরিচালনার কথা বলেছেন।

৭. দাসপ্রথা: টমাস একুইনাস এরিস্টটলের ন্যায় দাসপ্রথার পক্ষে ছিলেন। উভয়ে মনে করেন যে, রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব ও সমৃদ্ধির জন্য দাসপ্রথা ন্যায়সঙ্গত। তবে এরিস্টটল যেখানে সৎ জীবনকেই রাষ্ট্রের চরম ও পরম লক্ষ্য বলে বিবেচনা করেন, সেখানে একুইনাস বলেছেন সৎ জীবনই শেষ কথা নয় এবং পরে আরও এক জীবন আছে যা হলো আত্মার মুক্তি।

৮. ধর্ম ও দর্শন: একুইনাস সর্বপ্রথম এরিস্টটলের যুক্তিবাদী দর্শন গ্রহণ করেন। তিনি যুক্তিবাদী দর্শনকে খ্রিস্ট ধর্ম ও তত্ত্বের গৌরবময় পরিচ্ছদে আবৃত করে তার মতবাদ সুবিন্যস্ত করেন।

৯. আইলের সার্বভৌমত্ব: একুইনাসও এরিস্টটলের মতো আইনের সার্বভৌমত্বের প্রতি গুরুত্ব দেন এবং সবসময় আইনের সার্বভৌমত্ব মেনে চলার আদেশ দেন।

১০. বিশ্বাস ও যুক্তি: সেন্ট টমাস একুইনাস মনে করতেন, মানুষের জ্ঞান বা যুক্তি পূর্ণাঙ্গরূপে ত্রুটিহীন নয় অথবা যাবতীয় পার্থিব ক্রিয়াকলাপে তাকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারে না।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, একুইনাস মধ্যযুগের মত একটি অরাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নিজের অবস্থান দখল করে পুরো সমাজ কাঠামোকে যেভাবে বিশ্লেষণ করে যুক্তিভিত্তিক আলোচনা করেছেন তা শুধু বিস্ময়করই নয়, রীতিমতো অবিশ্বাস্য। তার দর্শনের মূল বিষয় ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই শক্তিকে একত্রিত করা। তাই সেবাইনের ভাষায় বলা যায়, “একুইনাসের দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় এ যে, এটি এমন এক প্রকার সার্বজনীন সংযোগ সাধনকারী এবং সর্ব পরিব্যাপ্তি পদ্ধতি যার প্রধান উদ্দেশ্য ঐক্য এবং সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠা করা।”