অথবা, নারী কল্যাণের লক্ষ্য ও মূলনীতিসমূহ তুলে ধর।
ভূমিকাঃ নারীদের কল্যাণ ও উন্নয়নের নিমিত্তে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন কার্যক্রম। মূলত যে কার্যক্রমের মাধ্যমে নারীর দৈহিক, আর্থিক, নৈতিক ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত হয় তাকেই নারীকল্যাণ বলে। নারী কল্যাণের লক্ষ্য ও নীতিমালাগুলো এর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক হয়েছে। বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আনয়নে উক্ত লক্ষ্য ও নীতিমালায় অতিসত্বর বাস্তবায়নে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তাই নারী কল্যাণের লক্ষ্য ও নীতিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য।
নারী কল্যাণের লক্ষ্য ও নীতিমালা: নারী কল্যাণের কিছু লক্ষ্য ও নীতিমালা নিম্নরূপ:
১. নারী-পুরুষের বৈষম্যের অবসান: সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্যের চিত্র চিরন্তন। যা দূর করা খুবই জরুরি। আর্থ উপার্জনমূলক সকল কর্মে নারীদের সক্রিয় ও কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজিস্থ নারী-পুরুষের বৈষম্যের অবসান ঘটানো।
২. নারী চাকরিজীবীদের জন্য Day care প্রতিষ্ঠা: বর্তমানে দেশে অনেক নারী বিভিন্ন চাকরিতে আছে। ক্রমশ নারী-কর্মজীবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কর্মজীবী নরীদের আবাসিক সুবিধা ও তাদের শিশুদের সেবা যত্নের উদ্দেশ্যে দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক Day care centre প্রতিষ্ঠা করা।
৩. নারী নেতৃত্বের জন্মদান: নারী নেতৃত্বের জন্মদানে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে যোগ্য নারী নেতৃত্বের বিকাশ সাধন করা।
৪. পারিবারিক ভূমিকা পালনে সহায়তা: নারীরা একটি পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পারিবারিক ভূমিকা যাতে সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে সেজন্য নারী কল্যাণ কার্যক্রমের মাধ্যমে যথেষ্ট সহায়তা করা হয়।
৫. শিক্ষা কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা: নারী শিক্ষিত হলে একটি দেশ দ্রুত শিক্ষিত হতে থাকে। সেজন্য প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল প্রকারের শিক্ষাকার্যক্রমে নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, শিক্ষাপ্রদানের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা ও তাদের এতে অনুপ্রাণিত করা।
৬. সামাজিক আইন বাস্তবায়নঃ বাংলাদেশে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে বেশ কিছু সামাজিক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এগুলোর যথার্থ বাস্তবায়ন করা হলে নারীদেরকে সমাজে, পরিবারে ও রাষ্ট্রে সমানাধিকার প্রদান করা সম্ভব হবে। তাই সামাজিক আইন বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
৭. শিশুকল্যাণকেও গতিশীলতা দানঃ নারী ও শিশুকল্যাণ পারস্পরিক ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। নারীদের উন্নতির উপরই শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ ও উন্নতি নির্ভর করে সেহেতু নরীদের কল্যাণের সাথে সাথে শিশুদের কল্যাণের নিমিত্তে শিশুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৮. পরিত্যক্ত অবহেলিত নারীদের পুনর্বাসনঃ বিধবা স্বামী পরিত্যক্ত, অবহেলিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত অসংখ্য নারী সমাজে অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। দারিদ্রদ্র্য কষাঘাতে তাদেরই ললাটে পড়েছে দুঃখেরই সূচনা। এমনকি তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এসব নারীদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করা।
৯. কর্মে যোগদানে ঋণ প্রদানঃ বাংলাদেশে নারীরা যাতে নিজেরাই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উৎপাদনমূলক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে। সেই লক্ষ্যে সকল প্রকার ঋণ সুবিধা প্রদান করা। যাতে তারা বেশ উদ্যোগী হতে পারে।
উপসংহার: পরিশেষে বলতে পারি যে, নারীকল্যাণ নারীদের কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। নারীদের উন্নয়ন ঘটানো মানেই শিশুর কল্যাণ সাধন। সেই সাথে সাথে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণ। তাই বাস্তবসম্মত প্রয়োজনীয় উদ্যোগের মাধ্যমে নারী কল্যাণের লক্ষ্য ও নীতিমালার সষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।