ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির মনোভাব আলোচনা কর।

অথবা, ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির ধারণা কী ছিল?

অথবা, ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির দৃষ্টিভঙ্গি সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির দর্শন আলোচনা কর।

অথবা, ম্যাকিয়াভেলি ধর্ম ও নৈতিকতাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?

অথবা, ম্যাকিয়াভেলির ধর্ম দর্শন ও নৈতিকতা সম্পর্কে কী জান? লিখ।

উত্তরঃ ভূমিকা: পঞ্চদশ শতাব্দীতে গির্জা ও রাষ্ট্রে সীমিত শাসন প্রবর্তনের ক্ষেত্রে পরিষদ আন্দোলনের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মধ্যযুগের অবসান সূচিত হয়ে আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয়। রাষ্ট্রচিন্তার এ যুগ সন্ধিক্ষণে সাধারণভাবে সমগ্র ইউরোপে এবং বিশেষভাবে ইতালিতে যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধিত হয় তার বাস্তব প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রদর্শনে। পাশ্চাতে ম্যাকিয়াভেলিই প্রথম ব্যক্তি যিনি সামাজিক নীতিবোধ থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে বিচ্ছিন্ন করেছেন। তাঁর মাধ্যমে প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রচিন্তা ও সমাজচিন্তার সূচনা হয়। ব্রনস্কি ও মজলিস বলেছেন, “Machiavelli was the first social scientist, in the same sense that Leonardo was one of the first natural scientists of the modern times.”

ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির মনোভাব: ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির ধারণা নিয়ে আলোচিত হলো:

প্রথমত, তিনি রাজনীতিকে ধর্ম ও নীতিশাস্ত্রের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করে তাকে একটি স্বাধীন ও স্বনির্ভর বিজ্ঞানে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া মানবপ্রকৃতিও তাকে কঠোর করে তোলে। মানবপ্রকৃতি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “A man more readily forgives the murder of his father than the condiscation of his patrimony.

দ্বিতীয়ত, একজন সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষক হিসেবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, মানুষ যেহেতু স্বভাবত স্বার্থপর ও প্রতারক, সেহেতু তাকে নৈতিক বা ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে শাসন করা অরণ্যে রোদন করারই শামিল। এজন্য ‘Policy of blood and iron’ বা ‘জেল-জুলুম নীতি’র উপর ভিত্তি করে তাকে শাসন করতে হয়, ধর্ম বা নীতিবাক্যের উপর ভিত্তি করে নয়।

তৃতীয়ত, ম্যাকিয়াভেলির ইতালিতে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আদৌ কোন স্থান ছিল না। মূল্যবোধের রাজ্যে তখন চলছিল এক চরম সংকট। একজন বাস্তব চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি ইতালির সমসাময়িক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শাসককে ধর্ম ও নৈতিকতার অনুশাসন বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের কল্যাণের পক্ষে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেন।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রচিন্তা ‘ম্যাকিয়াভেলিবাদ’ নামে সমালোচিত হলেও তিনি বাস্তববাদী দার্শনিক ছিলেন। বাস্তবতাকে প্রকাশ করতে তিনি কোন ধরনের কার্পণ্যবোধ করেন নি। মানব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তিনি শাসকের চরিত্র নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি বলেছিলেন, শাসককে হতে হবে শৃগালের ন্যায় ধূর্ত এবং সিংহের ন্যায় শক্তিশালী। বস্তুত ম্যাকিয়াভেলি মধ্যযুগের অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিকে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে আলোর পথে আনয়ন করেন। এজন্য তাঁকে অনেকে কৌশল বিজ্ঞানী হিসেবে অভিহিত করেছেন।