মৌলিক গণতন্ত্র কী?

অথবা, আইয়ুব খান প্রণীত মৌলিক গণতন্ত্র অধ্যাদেশ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, মৌলিক গণতন্ত্র সম্পর্কে তুমি কী জান?

উত্তরঃ ভূমিকা: ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। অন্যান্য সামরিক শাসকের ন্যায় আইয়ুব খানও তার ক্ষমতা সুসংহত করার ব্যাপারে অতি উৎসাহী ছিলেন। এজন্য তিনি জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন।

মৌলিক গণতন্ত্র: জেনারেল আইয়ুব খান ছিলেন অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি ক্ষমতার শীর্ষস্থানে আরোহণের স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর তিনি প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হয়েই নিজের ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় করার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এজন্য তিনি সামরিক শাসন জারি করে প্রচলিত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকার বাতিল করেন। ১৯৫৯ সালের ২৬ অক্টোবর (ডঃ আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন) তিনি মৌলিক গণতন্ত্র অধ্যাদেশ জারি করেন। এ অধ্যাদেশ বলে তিনি যে স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনা করেন তার নামকরণ করা হয় ‘Basic Democracy’ বা মৌলিক গণতন্ত্র। মৌলিক গণতন্ত্র অধ্যাদেশ ৪ স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন গড়ে তোলার কথা বলা হয়।

মৌলিক গণতন্ত্র অধ্যাদেশের প্রথম স্তরে ছিল ‘ইউনিয়ন কাউন্সিল’ পৌর এলাকায় ‘ইউনিয়ন কমিটি’ ছোট শহরে ‘টাউন কমিটি’। দ্বিতীয় স্তরে ছিল ‘থানা কাউন্সিল’ (পূর্ব পাকিস্তান) বা তহশিল কাউন্সিল (পশ্চিম পাকিস্তান) তৃতীয় স্তরে ছিল জেলা কাউন্সিল এবং চতুর্থ স্তরে ছিল ‘বিভাগীয় কাউন্সিল’। অধ্যাদেশ জারি কালে ‘প্রাদেশিক উন্নয়ন কাউন্সিল’ এর ব্যবস্থা ছিল যা ১৯৬২ সালের সংবিধানের অধীনে প্রাদেশিক আইন পরিষদ গঠন করার পর বাতিল করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানে ৪০ হাজার এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ৪০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী সদস্য নির্বাচিত হবেন বলে বিধান করা হয়। এ মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভোটেই ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, আইনসভার সদস্য ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৫৯ সালের আইয়ুব খান তার ক্ষমতাকে সুসংহত করার উদ্দেশ্যেই মৌলিক গণতন্ত্র অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। এ অধ্যাদেশের মাধ্যমেই জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করা হয়।