বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্বের বৃহৎশক্তিসমূহের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা মূল্যায়ন কর।

অথবা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিসমূহের অবদানগুলো আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিসমূহের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিশেষ করে তৎকালীন দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং উদীয়মান শক্তি হিসেবে বিবেচিত ভারত ও চীনের ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশেষভাবে আলোচিত হয়ে থাকে। উল্লিখিত শক্তিসমূহের মধ্যে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল সরাসরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক শক্তি। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ছিল বিরোধী পক্ষ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বৃহৎ শক্তিসমূহের ভূমিকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বৃহৎ শক্তিসমূহ দুই মেরুতে অবস্থান করছিল। এক মেরু স্বাধীনতার পক্ষে এবং অন্য মেরু স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। নিচে এ সম্পর্কে বৃহৎ শক্তিসমূহের ভূমিকা আলোচনা করা হলো:

স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল খুবই হতাশাব্যঞ্জক ও বিতর্কিত। মার্কিন সরকারি নীতি পাকিস্তানপন্থি হলেও কংগ্রেস এবং সিনেটের বিপুলসংখ্যক সদস্য, সরকারি কতিপয় আমলা ও বুদ্ধিজীবী মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। মার্কিন গণমাধ্যম, জনমতও ছিল বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল। তবে তৎকালীন নিক্সন, রোজার্স ও ড. কিসিঞ্জার প্রশাসন পুরো নয় মাস পাকিস্তানের জন্য নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সমর্থন যুগিয়েছে। মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন নীতির চারটি পর্যায় ছিল।

১. প্রথম পর্যায় (মার্চ-জুলাই) : এ পর্যায়ে মার্কিন নীতির প্রকৃতি ছিল কৌশলগত নিরপেক্ষতা। এ সময় মার্কিন সরকার বাংলাদেশ সমস্যাকে পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ হিসেবে অভিহিত করে। কিন্তু ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিং ওয়াশিংটনের এ দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে ১৫ এপ্রিল বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা কোনোভাবেই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হতে পারে না এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাপারের অজুহাতে সমগ্র বিশ্ব দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখতে পারে না। অবশেষে পত্রপত্রিকার প্রতিবাদ ও প্রবল জনমতের চাপে ৭ মে ওয়াশিংটন পাকিস্তানের জন্য সমরাস্ত্র সরবরাহ ও আর্থিক সাহায্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং মে মাসের দিকে ভারতে শরণার্থীদের জন্য ৩০ লক্ষ মার্কিন ডলার সাহায্য দেয়।

২. দ্বিতীয় পর্যায় (জুলাই-আগস্ট): এ পর্যায়ে মার্কিন নীতির মূল লক্ষ্য ছিল অখণ্ড পাকিস্তানের অধীনে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা এবং যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া। কিন্তু কোনোটিই সম্ভব হয়নি। কাজেই দ্বিতীয় পর্যায়েও মার্কিন নীতি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।

৩. তৃতীয়, পর্যায় (সেপ্টেম্বর-৩ ডিসেম্বর): এ পর্যায়ে নিক্সন প্রশাসন আরো বেশি পাকিস্তানপন্থি নীতি অবলম্বন করে। কলকাতায় অবস্থানকারী বাঙালি নেতৃবৃন্দের একাংশের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করে। এছাড়াও পাকিস্তান সরকারকে বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানের জন্য চাপ দেয়। যদিও তাদের উদ্যোগ প্রত্যাখ্যাত হয়।

৪. চতুর্থ পর্যায় (ডিসেম্বর ১৯৭১): ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রচণ্ড ভারত বিরোধী ও পাকিস্তান ঘেঁষা নীতি অনুসরণ করতে থাকে। পাকিস্তানকে যাবতীয় নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দানের জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সন হেনরি কিসিঞ্জারকে নির্দেশ দেন। ৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জন্য ৮৬.৬ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সাহায্য সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে। অপরদিকে, জাতিসংঘের মাধ্যমে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগও অব্যাহত থাকে। দিল্লি ও মস্কোর উপর চাপ প্রয়োগ করতে যুক্তরাষ্ট্র ‘এন্টারপ্রাইজ’ নামে পারমাণবিক জাহাজের নেতৃত্বে ৮টি জাহাজের একটি টাস্কফোর্স’ বঙ্গোপসাগরে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এটা ‘টাস্কফোর্স ‘৭৪ নামে পরিচিত। তবে জাতিসংঘে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মার্কিন ‘টাস্কফোর্স ‘৭৪ ভারত মহাসাগর ত্যাগ করে। তবে নিক্সন প্রশাসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করলেও মার্কিন সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদসহ বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় সর্বস্তরের মার্কিন জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা পালন করেছিল। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জর্জ হ্যারিসনের ‘বাংলাদেশ কনসার্ট’ ছিল মুক্তিযুদ্ধের এক বিরাট অনুপ্রেরণা।

স্বাধীনতা যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা: তৎকালীন পরাশক্তির মধ্যে একমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন বাঙালি গণহত্যাকে প্রথমে নিন্দা জানায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভারত তথা বাংলাদেশের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সোভিয়েত নীতিতে নানা ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এ নীতিতে ৩টি পর্যায়ে দেখানো যায়।

১. প্রথম পর্যায় (মার্চ-জুন): বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে সোভিয়েত নীতির প্রথম পর্যায়ে সতর্কতা লক্ষ করা যায়। ১৯৭১ সালে ৩০ মার্চ কমিউনিস্ট পার্টির ২৪ তম কংগ্রেসে ‘পূর্ব বাংলার’ জনগণের ন্যায়সংগত অধিকারের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমাধানে পৌছার কথা উল্লেখ করা হয়। প্রেসিডেন্ট পদগর্নি ২ এপ্রিল ইয়াহিয়াকে পত্রযোগে জরুরি ভিত্তিতে রক্তপাত ও নির্যাতন বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করার আহ্বান জানান। জুন মাস অবধি রুশ প্রশাসন শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করে।

২. দ্বিতীয় পর্যায় (জুলাই-নভেম্বর): ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট স্বাক্ষরিত হয় রুশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি, যা পাকিস্তানকে নৈতিকভাবে দুর্বল করে দেয়। এর পরের মাসে অর্থাৎ ২৭-২৯ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মস্কো সফরের পর রুশ নীতির এ অবস্থান আরো দৃঢ় হয়। এ পর্যায়ে বাঙালি বিরোধী যে কোনো আন্তর্জাতিক সমাধানের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নও তৎপর হয়ে উঠে।

৩. তৃতীয় পর্যায় (৩ ডিসেম্বর-স্বাধীনতা পর্যন্ত): ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধের জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন তার সীমান্ত রক্ষা ও জাতীয় স্বার্থে নিষ্ক্রিয় থাকবে না বলেও হুমকি দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন এ পর্যায়ে বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছানুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধির (আওয়ামী লীগ) কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরকে প্রাধান্য দেয়। যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিলে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যেন ভারতীয় বাহিনী সামরিক বিজয়ের প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ পায়। এজন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দিতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতিতে সমর্থন দেয় এবং ২১ ডিসেম্বর যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধে চীনের ভূমিকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই চীন সরকার পাকিস্তান ঘেঁষা নীতি অনুসরণ করে। মুক্তিযুদ্ধে চীনা নীতির দুটি পর্যায় ছিল:

১. প্রথম পর্যায় (এপ্রিল-সভেম্বর): ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার কর্তৃক বাংলাদেশে গণহত্যার প্রায় ১৫ দিন পর চীন সরকার ইয়াহিয়া খানকে পাকিস্তানে ভারতীয় সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা রক্ষায় চীন সরকার ও জনগণের সকল সময় সমর্থনের আশ্বাস দেয়। পাকিস্তানের সমস্যাকে চীন সরকার ‘অভ্যন্তরীণ সমস্যা’ হিসেবে আখ্যা দেয় এবং চীন তার সামরিক ও নৈতিক সহায়তা দিতে থাকে। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে চীন দক্ষিণ এশিয়ার উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য রুশ-ভারত মৈত্রী চুক্তিকে দায়ী করে।

২. দ্বিতীয় পর্যায় (৩-১৬ ডিসেম্বর): ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হলে চীন অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠে। চীন জাতিসংঘে রাশিয়া ও ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান নেয়। এ যুদ্ধের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নকে দায়ী করে একে প্রতিহত করার জন্য ঘোষণা দেয়। এর ফলে বাংলাদেশ ইস্যু নয় বরং রুশ-চীন দ্বন্দ্বই প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে চীন এক বিবৃতিতে ‘তথাকথিত বাংলাদেশ’ সৃষ্টির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের তীব্র সমালোচনা করে এবং বাংলাদেশকে ‘রুশ-ভারতের সৃষ্টি’ বলে মন্তব্য করে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে দু’ধরনের মত পরিলক্ষিত হয়। এক পক্ষের মতে, ভারত তার জাতীয় স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে। আর এক পদ্ধ বলেছেন যে, শুধু মানবিক বিচারেই ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন তাদের ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছে। মূলত মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় ভূমিকাকে তিনটি পর্যায়ে দেখা যেতে পারে:

১. প্রথম পর্যায় (এপ্রিল-জুলাই) : এ পর্যায়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ব্যাপারে বাংলাদেশকে সরাসরি সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে ভারত আগ্রহী ছিল না। তবে এ পর্যায়ে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয় এবং বাংলাদেশ সরকারকে ভারতীয় এলাকায় রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর সুযোগ করে দেয়। এর ফলে জুন পর্যন্ত ভারতে শরণার্থী সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ লক্ষ। এ পর্যায়ে ভারতের মাটিতে বাঙালি যোদ্ধাদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেওয়া শুরু হয় এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা RAW (Research and Analysis Wing) এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় মুজিব বাহিনী।

২. দ্বিতীয় পর্যায় (আগস্ট-নভেম্বর): জুলাই মাস থেকে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি
নিয়মিত ধ্বংস করার কাজে আত্মনিয়োগ করে। এ সময়ে অর্থাৎ ৯ আগস্ট রুশ ভারত মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশসংক্রান্ত ভারতের নীতি ও কর্মসূচির পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। ইন্দিরা গান্ধীর রাশিয়া সফরে ভারতকে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়।

৩. তৃতীয় পর্যায় (৩-১৬ ডিসেম্বর): ৩ ডিসেম্বর ভারতের বিমানঘাঁটিতে পাকিস্তান বিমান হামলা চালালে চূড়ান্ত
যুদ্ধ শুরু হয়। ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে ভারত স্বীকৃতি দেয়। ভারত স্থল, নৌ ও বিমানপথে যুদ্ধ শুরু করে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পাকিস্তান প্রতিক্ষেত্রেই পরাজিত হয়। অবশেষে বাঙালি মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী সম্মিলিতভাবে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা পৌছে। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর অধিনায়ক লে. জে. আমির আবদুল্লাহ নিয়াজী যৌথবাহিনীর অধিনায়ক লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরার নিকট আত্মসমর্পণ করে।

৪. স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের বেসরকারি সহযোগিতা: ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সংগঠন, বুদ্ধিজীবী পেশাজীবী এবং সাধারণ জনগণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অকুণ্ঠ সহানুভূতি প্রকাশ করে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য দিয়ে সহায়তা করে সর্বস্তরের ভারতীয় জনগণ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বুদ্ধিজীবীরা ‘শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি’ গঠন করে অর্থসংগ্রহ ছাড়াও জনমত সৃষ্টিতে অবদান রাখেন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ভারতের ভূমিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে একেবারে একাকার হয়ে আছে। কেননা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য চার হাজার ভারতীয় অফিসার ও জোয়ানের আত্মত্যাগ এবং ভারতীয়দের সহমর্মিতা, ভালোবাসা এগুলো ছিল অকৃত্রিম।